Monday, July 22, 2019

উর্দিবিহীন অস্পষ্ট ‘এরশাদ’দের শাসনকর্তৃত্ব



বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের দুরাবস্থা বোঝার একটা মানদণ্ড হতে পারেন ‘এরশাদ’। এরশাদের মতো একজন ভাঁড় স্বৈরাচারী শাসক একেবারে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগ পর্যন্ত বিভিন্নভাবে আমাদের ‘গণতান্ত্রিক’ ব্যবস্থার সাথে জড়িত ছিলেন, এই তথ্য একদিকে যেমন আমাদের গণতন্ত্রের ‘স্বৈরাচারী’ দিকটা ফুটিয়ে তুলে, তেমনি কে কীভাবে কার লেজুড়বৃত্তি করে ঠিকে থাকে তারও একটা নমুনা বটে।

যে বা যারা এরশাদের পতনের জন্যে আন্দোলন করেছিলেন তারাই আবার কোনো না কোনো ভাবে এরশাদকে পাশে রেখেছেন, তা তিনি মাদার অব ডেমোক্রেসি হোন আর গণতন্ত্রের আপোষহীন নেত্রীই হোন! ‘গণতন্ত্রে’ পাশে ‘স্বৈরাচার’ কীভাবে সহাবস্থান করে, বা গণতন্ত্রের ভেতর স্বৈরাচার কীভাবে লুকিয়ে থাকে তার একটা টেক্সটবুক এক্সাম্পল হচ্ছেন এরশাদ ও আমাদের রাজনীতি!

সবচেয়ে বড়ো সত্য হচ্ছে, এরশাদ পতনের পর আমাদের এখানে প্রতি চারবছর পর আরেকজন এরশাদ পেয়েছি। পূর্বের এরশাদ ছিলেন পরিষ্কার, তিনি যে আমাদের স্বৈরাচারী, তিনি যে আমাদের শত্রু তা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট ছিল।

কিন্তু, এরপর যে এরশাদরা ক্ষমতায় এলেন, তাদের চেহারা অস্পষ্ট, তাদেরকে চিনতে আমাদের কষ্ট হয়েছে। সে দিক থেকে পূর্বের এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে ওঠা যতটা সহজ, নতুন ‘সাংবিধানিক’ এরশাদদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে উঠা ততটাই কষ্টকর।

খাল কেটে সানগ্লাস পরে পোজ দিয়ে ইমেজকেন্দ্রিক প্রোপাগান্ডার রাজনীতি শুরু করেছিল জেনারেল জিয়া, সাইকেল চড়ে সেটা অব্যাহত রেখেছিলেন এরশাদ। এরশাদ অবশ্য শোনা যায় এই রাজনীতিকে নতুন লেভেলে নিয়ে গিয়েছিলেন। গ্রামে-গঞ্জে পীরদের কাছে দৌড়াদৌড়ি করেছেন, বন্যা হলে নাকি পানিতে নেমে গিয়েছিলেন, কবিতাও লিখেছিলেন। এরশাদ এ দিক দিয়ে তার যোগ্য অনেক উত্তরসূরি রেখে গিয়েছেন। তারাও কখনো খাল কাটেন, কখনো পাব্লিক বাসে উঠে পড়েন, ভ্যানে চড়েন। তারপর রাস্তায় ব্যানার ছবি টানিয়ে সেটা উদযাপন করেন।

এরশাদ ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করেছিলেন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, তখন শেখ হাসিনা তো বটেই, এমনকি খালেদা জিয়া পর্যন্ত হুশিয়ারি করেছিলেন যে, এরশাদ ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছেন। তারা ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্রধর্ম বাতিল করে দিবেন। কিন্তু পদ্মা-মেঘনা জল গড়িয়ে শুকিয়ে মারা যাচ্ছে, রাষ্ট্রধর্মের গায়ে কেউ হাত দিতে পারেন নাই, বরং তারা উল্টো নিত্য-নতুন উপায়ে ধর্মকে ব্যবহার করে গিয়েছেন। সে দিকেও তারা ছাড়িয়ে গিয়েছেন এরশাদকে।


কেবল বাংলাদেশেই নয়, বর্তমানে দুনিয়ার অনেক স্থানেই এরশাদরা ক্ষমতায়। পার্থক্য শুধু এটাই যে এরশাদের পরিচয় ছিল স্পষ্ট, তার একটা উর্দি ছিল। কিন্তু এখনকার এরশাদদের উর্দি নাই, তারা দেখতে হুবুহু আমাদের মতো, বা আমাদের মতো হওয়ার চেষ্টা করেন। তাই এখনকার এরশাদদের আমরা কখনো চিনতে পারি না, আর কখনো ভালোবেসেও ফেলি!

কিন্তু, সত্য হচ্ছে, এরশাদদের মৃত্যু হয়, যেমন ক্ষমতার, তেমন দেহের।

ফেসবুক পোস্টঃ ১৪ জুলাই, ২০১৯।

No comments:

Post a Comment