বিশ্ববিদ্যালয়
থেকে রাজনীতি দূর করতে হবে; এই বিষয়টায়
আমাদের সুশীল-সামরিক সকল মহলে এক বিরাট ঐক্যমত্য আছে। বাংলাদেশে খোদ ‘রাজনীতি’র
সংজ্ঞাটাই যখন ‘দুই-দলীয় মাইর’ তত্ত্বে বিলীন হয়ে যায় তখন এমন একটা বিষয়ে যে
এক ধরনের জন-সম্মতি গড়ে উঠবে বা গড়ে তোলা সম্ভব হবে তা খুব বিস্ময়কর নয়।
কিন্তু,
রাজনীতি বিতাড়ন করতে গিয়ে আরেকটা প্রশ্ন তারা আড়ালে
রাখেন,
সেটা হচ্ছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কি আদতেও
‘বিশ্ববিদ্যালয়’ হয়ে উঠতে পেরেছে? সুখের কথা, আমাদের এখানে নব্য উপনিবেশিক (নিও
কলোনিয়াল) ও নব্য উদারবাদী (নিও লিবারেল) যুগ-বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে অনেকেই এই
প্রশ্নগুলো তোলা শুরু করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পর্কে গৎবাঁধা আলোচনার বাইরে আমাদেরকে বিকল্প চিন্তা-ভাবনার রসদ দিচ্ছেন
তারা।
বাংলাদেশের
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বর্তমান সংকট যে কত গভীরে তাঁর একটা বিশ্লেষণ সৈয়দ নিজার
তাঁর বইতে হাজির করেছেন। তিনি বলছিলেন, নিও লিবারেল দুনিয়ায় পুঁজির চাপ ও জ্ঞান উৎপাদনের দায় এই দুইয়ের মধ্যে
কোনো সামঞ্জস্য তৈরি করতে না পেরে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ‘অস্তিত্ব সংকটে’
ভুগছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাসমূহের ঐতিহাসিক কারণও আছে।
যে বিশ্ববিদ্যালয়
আমরা দেখতে পাই তা গড়ে উঠেছে ঔপনিবেশিক কাঠামোর আদলে, উপনিবেশের স্বার্থে। মুক্ত জ্ঞান সৃজন নয়, দাপ্তরিক কাজের জন্যে দক্ষ লোকবল তৈরি করাই এগুলো স্থাপনের
নেপথ্যে মুখ্য উদ্দেশ্য হিসেবে কাজ করেছে। সরকারী কাজ চালানোর জন্যে সরকারী চাকুরে
তৈরি করা। প্রাক ঔপনিবেশিক আমলে পিতা মাতা যেখানে সুস্থ সন্তান কামনা করতেন, ঔপনিবেশিক আমলে সেখানে তারা চাইতেন তাদের সন্তান যেন সরকারি
চাকরি করে।
উপনিবেশ
শারীরিকভাবে আমাদের ছেড়ে গিয়েছে অনেকদিন, কিন্তু ঔপনিবেশিক বাস্তবতার সাথে এই জমানার বাস্তবতার খুব একটা ফারাক নাই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই ভেবে গর্ব করে যে তারা প্রতি বছর শতশত আমলা তৈরি
করে। বিসিএসের পরীক্ষার তারিখের ওপর নির্ভর করে কখনো-সখনো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের
বিভিন্ন পরীক্ষার তারিখও আগানো-পিছানো হয়ে থাকে। মানে, জ্ঞান উৎপাদন বা গবেষণা তাদের জন্যে খুব একটা বড়ো বিষয়
না। নামে- বেনামে যে কোনো ওয়েবসাইটের র্যাংকিংয়ে নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম
দেখলে পিতা (ভিসি) সহকারে আনন্দ মিছিল করার কর্মসূচিটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো
খুব আনন্দ নিয়ে উদযাপন করে থাকে। এটাও বোধহয় তাদের একটা কাজ!
সরদার ফজলুল
করিম বোধহয় কোন এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আমাদের পিতৃ পরিচয় ভুলিয়ে দেয়। মানে হচ্ছে
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আমাদেরকে মাটি ও মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন করে। এই
বিচ্ছিন্নতা তো উপনিবেশের ফলাফল। ইংরেজি সাহিত্য ইংল্যান্ডে পড়ানোর আগে ভারতে
পড়ানো হয়েছে। উপনিবেশনের পক্ষে সম্মতি আদায়ের অংশ হিসেবে ইংরেজি জানা ও ‘ইউরোপ
মননে’র মানুষতো লাগবেই। তার কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরত তো ঐটুকুই! এই জমানায়
আমাদের পরিস্থিতি তো একইরকম। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জ্ঞান উৎপাদন করবে না, বিশ্ব বাজারে শুধু শ্রমিক যোগান দিবে! এটা কোনো লুকানো কথা
নয়,
আমাদের মঞ্জুরি কমিশন গর্বে বুক ফুলিয়ে বলে বেড়ায় যে, তারা বিশ্ববিদ্যালয় চালাচ্ছে মুনাফামুখী প্রতিষ্ঠান
‘বিশ্ব-ব্যাঙ্কে’র উপদেশে।
মুনাফামুখীন
কোনো প্রতিষ্ঠান ‘জ্ঞান উৎপাদন’ করে কি করবে? তার দরকার সস্তা শ্রম। জ্ঞান উৎপাদন তো ‘প্রথম’ বিশ্ব করছে, তৃতীয় বিশ্ব বরং সস্তায় ‘স্কিলড’ শ্রমিকের যোগান দিয়ে
যাক। এইটা ব্যক্তির নীতি নয়, এটা আমাদের
রাষ্ট্রের নীতি, এই নীতিতেই চলছে আমাদের
বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ। একদিকে রাষ্ট্র তার শুঁড় ঢুকিয়ে রাখে বিশ্ববিদ্যালয়ে, অপরদিকে ঐতিহাসিকভাবে উপনিবেশিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের
কলকব্জাসমূহ এমন কিছু তৈরি করতে পারে না যা দিয়ে নিজেরা নিজেদের রাষ্ট্র চালানো
সম্ভব। ফলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ একটাই, মুনাফা ঠিকঠাক মতো মুনাফাখোরদের পকেটে যাচ্ছে কি না সেটার
খেয়াল খবর রাখা। যদি মুনাফাখোররা মুনাফা না পায় তাহলে স্বয়ং রাষ্ট্র তার
অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হাজির হবে। এর একটা প্রমাণ হচ্ছে সাম্প্রতিক দুধের ইস্যু।
ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন গবেষক তাদের অনুসন্ধান শেষে জানিয়েছেন, বাজার থেকে যেসব কোম্পানির পাস্তুরিত দুধ আমরা কিনে খাই, তাতে ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিক ও ডিটারজেন্টের উপস্থিতি
পাওয়া গেছে। প্রাণমিল্কসহ বাজারে প্রচলিত সাত কোম্পানির পাস্তুরিত দুধে মানব
চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক, এবং ৭টি প্রতিষ্ঠানের পাস্তুরিত দুধের তিনটিতে এবং তিনটি অপাস্তুরিত দুধে
ডিটারজেন্ট পাওয়া গেছে। পরীক্ষার ফলাফল উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
বায়োমেডিকেল রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক এবং ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম
ফারুক। পরবর্তীতে অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের
দ্বিতীয় দফার পরীক্ষায় আগের চেয়ে বেশি অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গিয়েছে বলে
জানানো হয়।
খবরটা
প্রকাশিত হওয়ার পরপরই দেশে মোটামুটি একটা আলোড়ন পড়ে যায়। এই পরীক্ষার ফলাফল
তাঁর জানানোর দায়িত্ব ছিল, তিনি জানিয়েছেন, পত্রিকাওয়ালারা ফলাও করে প্রকাশ করেছে, আমরা সংবাদ ও দুধ ভোক্তারা সেই খবর পড়ে আতঙ্ক বোধ করেছি, ফলস্বরূপ, সামাজিক যোগাযোগ
মাধ্যমে যেমন সমালোচনা-রাগ-ক্ষোভ প্রকাশিত হয়েছে, তেমনি বাজারেও এর প্রভাব পড়া শুরু করেছে। এই প্রতিবেদনের সংবাদ প্রকাশ হওয়ার
পর থেকে সবার মনে যে আতঙ্ক তৈরি হয় তাঁর ফলস্বরূপ দেখা গেলো, সপ্তাহের ব্যবধানে তরল দুধের বিক্রি কমেছে ৩৩%।
দুইদিন পর
মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন সেই গবেষককে
হুমকি দিলেন, বললেন, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হতে আইনি নোটিশ পাঠাবেন। এই যে হুমকি ধামকি সেটা আমাদের
জন্যে ভয়ঙ্কর, দুধে অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতির
মত ভয়ঙ্কর। এর ফলাফল আরো মারাত্মক। সচিব যখন সংবাদ সম্মেলনে এই আইনি নোটিশ
পাঠানোর কথা বলেছিলেন তখন এমনভাবে ‘পিয়ার রিভিউ’র কথা বলছিলেন যেন পিয়ার রিভিউ
করা ছাড়া কোন ল্যাব-টেস্টের কথাও জানানো যায় না। এগুলো মানুষকে বিভ্রান্ত করার
পাঁয়তারা কোনো সন্দেহ নেই। তার সেই অনুষ্ঠানের খবর পড়লে যে কারো মনে হতে পারে, এই ফলাফলের বিরুদ্ধে তাদের মূল আপত্তির উৎস হচ্ছে ঐ
বিক্রি-বাট্টা কমে যাওয়া। মুনাফাখোরদের পেটে ক্ষণিকের জন্যে হলেও লাথি পড়া।
এটা আমাদের
উচ্চশিক্ষা তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান সঙ্কট বুঝতে সাহায্য করতে পারে। সৈয়দ
নিজার তার বইতে জানাচ্ছেন যে, একটা বিশ্ববিদ্যালয়কে আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার জন্যে
দুইটা শর্ত পূরণ করতে হয়। একটা হচ্ছে, জ্ঞানতাত্ত্বিক শর্ত; দুই, আইনি শর্ত। জ্ঞানতাত্ত্বিক শর্ত হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় ‘সার্বিক জ্ঞান’ প্রচার ও চর্চার কেন্দ্র।
আর,
আইনি শর্ত হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় যে সার্বিক জ্ঞান উৎপাদন করবে তা সমাজ, রাষ্ট্র ও ধর্মের রীতির বিরুদ্ধে গেলেও প্রকাশযোগ্য। এই দুই
শর্তের নিরিখে দাঁড়িয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের হালচাল দেখতে বেশি সুবিধা।
পূর্বেই
বলেছি,
ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকার বহনকারী ও নব্য উদারবাদী অর্থনীতির
ভোক্তা হিসেবে ‘গবেষণা’ বা ‘জ্ঞান উৎপাদন’কে বহুদিন পূর্বেই আমরা অ্যাকাডেমিক
পরিসর থেকে বিতাড়িত করেছি, রাষ্ট্রীয়ভাবে।
ইউজিসি যে পরিকল্পনা বিশ্বব্যাংক করে দিয়েছে সেটাতে জীবন-জগত যে সম্পর্কে
দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ ঘটেছে তাতে বাজার, মুনাফা, প্রতিযোগিতা ইত্যাদি শব্দের আনাগোনা
দেখলেই বোঝা যায়। সে দৃষ্টিভঙ্গি জ্ঞান-উৎপাদনের নয়, সেটা ব্যবসায়ীর; সেখানে শিক্ষক-ছাত্রের সম্পর্ক জ্ঞানের উত্তরসাধক-পূর্বসাধক নয়, সেটা ক্রেতা-বিক্রেতা সম্পর্ক। এমন সম্পর্ক এমন দৃষ্টিভঙ্গি
পুঁজির নিয়মানুসারে প্রথম দুনিয়ার জ্ঞানের ভোক্তা ছাড়া আর কিছুই বানায় না।
নিজের
রাষ্ট্র কেমন চালাতে হবে সেই জ্ঞান ধার করতে হবে মুনাফামুখী প্রতিষ্ঠান থেকে। যার
ফলে গবেষণাখাত সবসময় অবহেলিত থাকে, উপেক্ষিত থাকে। জাতীয় দৈনিক বণিক বার্তার সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন থেকে জানা
গেছে,
গবেষণা ছাড়াই চলছে ৭টি বিশ্ববিদ্যালয়। বেশ কিছুদিন আগে
আরেকটা প্রতিবেদনে পড়েছিলাম, বিভিন্ন
বিশ্ববিদ্যালয়ে যে গবেষণাকেন্দ্র রয়েছে তাদের অধিকাংশ কোনো গবেষণা ছাড়াই চলছে, দুয়েকটা সেমিনার করেই তাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়।
গবেষণা খাতে বাজেটে বরাদ্দ আশানুরূপ যে নেই সেটা সরকারী বুদ্ধিজীবীরা পর্যন্ত বলে
থাকেন। এই হলো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানতাত্ত্বিক শর্ত পূরণের একেবারে উপরি
একটা স্তর।
আর, আইনি শর্ত যে কতটা নাজেহাল সেটার উদাহরণ বিশ্ববিদ্যালয়
সমূহ যে আইনে চলে সেটা থেকেও উদাহরণ দেয়া যায়। ঐদিকে না গিয়ে বরং, একেবারে সাম্প্রতিক দুধের ইস্যুটাই একটা জীবন্ত উদাহরণ।
গবেষণার ত্রুটি (যদি থেকেও থাকে) সেটা তো আরেক গবেষণা দিয়েই দেখিয়ে দিতে হবে।
প্রয়োজন হলে একটা গবেষণার বিপরীতে হাজারটা গবেষণা হতে পারতো।কিন্তু, এমন কোন রাস্তায় না গিয়েই আমাদের মহামান্য সচিব জানাচ্ছেন
এই রিপোর্ট ভুল, তাই আইনি আশ্রয় নিতে হবে। অর্থাৎ, কোনো গবেষণা ভুল হলে সেটা আইনি বিষয়! এমনিতেই আধুনিক
বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার যে উপরোক্ত যে দুইটা শর্তের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা ‘আইন’
অনুযায়ী অনুপস্থিত, উল্টো কেউ যদি
ব্যক্তিগতভাবে কোনো গবেষণা করেন সেটাও জোর করে বন্ধ করে দিতে উদ্যত আমাদের
রাষ্ট্র! গবেষণা ভুল হলেও (ধরে নিলাম ভুল) এর বিরুদ্ধে ‘লিগ্যাল একশনে’ যাওয়াটা
তো বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে ধ্বংসাত্মকও।
চাইলে এই
একটা ঘটনা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্কট পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিতে পারে! একজন
শিক্ষক ক্লাসে কি পড়াবেন সেটাও ভয়ানক-ভাবে ‘শর্তায়িত’; চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা আমাদের মনে সজীব।
পাঠ্যক্রম মর্জিমাফিক হয় নাই বলে একদল শিক্ষার্থী শিক্ষকের গায়ে আগুন দিচ্ছে, আবার রাষ্ট্র বসে আছে গবেষকরা কি গবেষণা করছেন তা পছন্দ না
হলে ‘লিগ্যাল একশন’ নিতে। অদ্ভুত!
রাষ্ট্রের
মাথায় যেমন একজন সমগ্র ক্ষমতা নিয়ে বসে আছেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মাথাতেও তেমনি একজন করে সামন্ত প্রভু (ফিউডাল
লর্ড) বসে আছেন। মূলত তিনিই বিশ্ববিদ্যালয়। তার আঙুলে নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের
পাতাও নড়ে না। তাদের বাসস্থান একেকটা ক্যান্টনমেন্ট। ক্ষমতার পুরো নাট বল্টু তার
হাতে। এটা ধীরে ধীরে নিচে নামে। সবাই সবার সাথে ক্ষমতার শিকলে বাঁধা পড়ে
গিয়েছেন। আর পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ই তো আমলাতন্ত্রের ঘাঁটি। একটা অফিসিয়াল
ডকুমেন্ট তুলতে হলে আপনাকে ক্ষমতার প্রত্যেকটা স্তরে একবার করে সালাম ঠুকা লাগবে।
এর প্রভাব শুধু যে শিক্ষক-ছাত্রের সম্পর্কে কলুষিত করছে তা না, শিক্ষার্থীদের নিজেদের সাথে নিজেদের সম্পর্ককেও কলুষিত
করছে। বন্ধুদের মাঝে আছে নিওলিবারেল
‘প্রতিযোগিতা’। সিনিয়র জুনিয়র, সংগঠনের
প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি সবখানেই এই ক্ষমতা সম্পর্ক। মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারী সংগঠনও
একেকটা বিশ্ববিদ্যালয় বা একেকটা রাষ্ট্র। সেখানেও একজন প্রধানমন্ত্রী বা ভিসি
থাকেন। সবাই ক্ষমতা প্রদর্শনে আগ্রহী, সবাই প্রতিযোগিতায় লিপ্ত, সবাই মেনে নিয়েছি
এই প্রতিযোগিতা মহান। সবাই একসুরে নিওলিবারেল শব্দটা উল্লেখ না করেও এর গুণগান
গেয়ে যাচ্ছি। ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ শব্দটা খোদ টিকে আছে কি না তা নিয়ে আমাদের
ভ্রুক্ষেপ করার খুব একটা সময় নাই।
আমরা কেমন
বিশ্ববিদ্যালয় চাই, আমাদের
বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপকাঠামো কী হবে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান উৎপাদন করবে
নাকি দক্ষ শ্রমিক বানানোর কারখানা কিংবা ভোক্তাই হবে, সেটা আমাদেরকেই ঠিক করতে হবে। যতদিন না আমাদের
বিশ্ববিদ্যালয়কে আমাদের মাটির সাথে সম্পর্কিত করতে পারব, ও ‘নিঃশর্ত’ জ্ঞান উৎপাদন করতে পারব ততদিন আমাদের রাষ্ট্র
ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র হিসেবেই টিকে থাকবে। এই রাষ্ট্র চলবে মুনাফামুখী প্রতিষ্ঠানের
আঙুলের নির্দেশে। আমরা কীভাবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে সাজাবো তার উপরেই নির্ভর
করবে আমাদের ভবিষ্যতের রাষ্ট্র কেমন হবে তার চিত্রও। তাই বলে একটার সাপেক্ষে
আরেকটা জিনিস আপনাআপনিই মিলে যাবে, বিষয়টা এমনও না। বিশ্ববিদ্যালয়
রাষ্ট্রের বাইরের কিছু না, রাষ্ট্রের সঙ্গে
তার সম্পর্কটা পারস্পারিকই বটে। দেশ পুড়লে কি দেবালয় রক্ষা পায়? রাষ্ট্রের নিপীড়নমূলক চরিত্রের বিরুদ্ধে আমাদের যে আন্দোলন
তারই একটা অংশ হতে হবে ‘বিশ্ববিদ্যালয়’কে বিশ্ববিদ্যালয় করে তোলার আন্দোলন! এর
মধ্যেই গোটা সমাজের মঙ্গলের প্রশ্নটা নিহিত।
দোহাই:
১) সৈয়দ নিজার, বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভব, বিকাশ ও বিউপনিবেশায়ন, সংহতি প্রকাশনী।
২) মোহাম্মদ আজম, বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষায় ‘নব্য-উদারনীতিবাদ’: বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ‘কৌশলপত্র’ কেন গ্রহণযোগ্য নয়?, একাডেমিয়া
দোহাই:
১) সৈয়দ নিজার, বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভব, বিকাশ ও বিউপনিবেশায়ন, সংহতি প্রকাশনী।
২) মোহাম্মদ আজম, বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষায় ‘নব্য-উদারনীতিবাদ’: বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ‘কৌশলপত্র’ কেন গ্রহণযোগ্য নয়?, একাডেমিয়া
No comments:
Post a Comment