Saturday, September 8, 2018

কাহলিল জিব্রানের The Madman: কয়েকটি প্যারাবল


[১৮৮৩ সালে কাহলিল জিব্রান লেবাননের উত্তরে এক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা কাহলিল একজন ট্যাক্স কালেক্টর ছিলেন। মায়ের নাম ছিল ক্যামিলা রামেহ। ১৮৯৫ সালে জিব্রানের মা তার চার সন্তানকে নিয়ে জীবিকার তাগিদে বোস্টনে পাড়ি জমান। ১৮৯৮ সালেই জিব্রান আবার লেবাননে চলে আসেন আরবি এবং ফ্রেঞ্চ শেখার জন্যে। আবারো বোস্টনে ফিরে যান তিনি আরো ৪ বছর পরে, ১৯০২ সালে। এর মাঝে যক্ষ্মা ও ক্যান্সারের কারণে তিনি হারিয়ে ফেলেন তার এক বোন, এক ভাই এবং মাকে। ১৯০৮ সালে তিনি পাড়ি জমান প্যারিসে, আর্টের জন্যে। ১৯২৩ সালে প্রকাশিত হয় তার সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকর্ম “The Prophet”কেউ কেউ বলেন, "the most loving book ever written."১৯৩১ সালে মাত্র ৪৮ বছর বয়সে নিউইয়র্কের এক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। অতঃপর তার দেহ নিয়ে যাওয়া হয় লেবাননে। উল্লেখ্য, ১৯১৮ সালে প্রকাশিত The Madman বইটা তার প্রকাশিত প্রথম ইংরেজি সাহিত্যকর্ম। আর হ্যাঁ, ছবিগুলো জিব্রানেরই আঁকা]




The new pleasure
গতরাতে আমি নতুন এক আনন্দের সন্ধান পাই; এবং প্রথমবারের মত যখন সেটা পরখ করতে গেলাম একজন দেবদূত ও একজন শয়তান দ্রুত বেগে আমার গৃহের দিকে আসতে লাগলেন। আমার দরজার সম্মুখেই তাদের সাক্ষাৎ হয় এবং আমার নতুন আনন্দকে নিয়ে তুমুল তর্কে লিপ্ত হন দুজন।
একজন তীব্র অনুযোগের স্বরে বললেন, ‘এইটা পাপ!
অন্যজন বলে উঠলেন, “না, এইটা পুণ্য!




The two learned men
আফকার নামক শহরে দুজন শিক্ষিত লোক বসবাস করতেন এবং দুজনেই একে অপরের শিক্ষাকে চরম ঘৃণার চোখে দেখতেন। তাদের একজন ঈশ্বরের অস্তিত্বকে অস্বীকার করতেন এবং অন্যজন ছিলেন পুরোদমে আস্তিক।
একদিন বাজারে তাদের দুজনের দেখা হয় এবং অনুসারীদের সামনেই ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে তুমুল যুক্তি তর্ক মেতে উঠেন। এবং কয়েক ঘণ্টা বচসার পরে দুজন ক্ষান্ত দেন।
ঐ সন্ধ্যাতেই ...
যিনি নাস্তিক ছিলেন, তিনি মন্দিরে গমন করে নিজেকে সমর্পণ করেন ঈশ্বরের সামনে এবং নিজের অতীতের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ঠিক এই সময়েই, অপর শিক্ষিত লোক, যিনি ছিলেন পুরোদমে ঈশ্বরে বিশ্বাসী , পুড়িয়ে ফেলেন তার সকল পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থাবলী। অতঃপর, তিনি হয়ে যান সম্পূর্ণ নাস্তিক।



The good God and the evil God
পাহাড়ের এক চূড়ায় মঙ্গলের দেবতা এবং অনিষ্টের দেবতার সাক্ষাৎ হয়। মঙ্গলের দেবতা বললেন, ‘শুভ সকাল, ভ্রাতা!
অনিষ্টের দেবতা কোন জবাব দিলেন না। এবং মঙ্গলের দেবতা আবারো বলেন, ‘আজকে মন খারাপ মনে হচ্ছে!
হুমবললেন অনিষ্টের দেবতা, “প্রায়ই মানুষ আমাকে তুমি মনে করে তোমার নামে ডাকে, আমাকে তোমায় ভেবে তোমার মত করে আচরণ করে। এবং এটা আমাকে পীড়ন দেয়
মঙ্গলের দেবতা তখন বললেন, ‘কিন্তু আমাকেও তো তুমি ভেবে ভুল করা হয়!
অতঃপর, অনিষ্টের দেবতা মানুষের বোকামিকে অভিশাপ দিয়ে হন হন করে চলে গেলেন।



Ambition
সরাইখানার টেবিলে তিনজন লোক মিলিত হলেন; একজন তাঁতি, একজন কাঠমিস্ত্রি এবং একজন কৃষক।
তাঁতি বলে উঠলেন, “আমি আজকে সবচেয়ে ভালো শবাচ্ছাদন বস্ত্র বিক্রি করেছি দুটো স্বর্ণমুদ্রার বিনিময়ে। চলো, কিছু পান করা যাক!
এবং আমি”, কাঠমিস্ত্রি বললেন, “আমি আজকে সর্বোৎকৃষ্ট কফিন বিক্রি করেছি। মদের সাথে রোস্ট নেব আজকে
কৃষক বললেন, “আমি শুধু একটা কবরই খুঁড়েছি, কিন্তু মালিক আমাকে দিগুণ পরিশোধ করেছেন। তাই মধু কেকও নেয়া যাক সাথে
সে সন্ধ্যায় পানশালাটা খুবই ব্যস্ত ছিল; বারে বারে মদ, মাংস আর কেক আসছিল টেবিলে। এবং তারা তিনজনই খুবই উৎফুল্ল ছিল।
সরাইরক্ষক তার হাত কচলাচ্ছিলেন এবং স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসছিলেন, কেননা অতিথিরা হাত খুলে খরচ করছিলেন।
তারা যখন চলে যাচ্ছিল আকাশে তখন পূর্ণ চাদ এবং তারা গলা ছেড়ে গান গাইতে গাইতে এবং চিৎকার করতে করতে হাঁটছিল। সরাইরক্ষক তার স্ত্রীর সাথে সরাইখানার ফটকে দাঁড়িয়ে তাদেরকে দেখছিলেন।
আহ!স্ত্রী বললেন, “ভদ্রলোকেরা! বড়ই খরুচে এবং বড়ই প্রাণচঞ্চল! তারা যদি প্রতিদিন এমন সৌভাগ্য নিয়ে আসত, তাহলে আমাদের ছেলেকে আর সরাইরক্ষক হতে হত না এবং এত কষ্ট করতে হত না। আমরা তাকে পড়ালেখা করাতাম এবং একদিন সে একজন যাজক হত




The wise king
কোন একসময় উইরানি নামক এক দূরবর্তী শহরে এক প্রতাপশালী ও জ্ঞানী রাজা শাসন করতেন। তার শক্তিমত্তার জন্যে তিনি ছিলেন ভীত এবং জ্ঞানের প্রতি ছিল তার অগাধ ভালোবাসা।
তো, সেই শহরের প্রাণকেন্দ্রেই ছিল একটি কুয়ো ; যেমন ঠাণ্ডা ছিল এর পানি তেমন ছিল স্বচ্ছ। শহরের সকল অধিবাসীরা এমনকি রাজা স্বয়ং এই কুয়ো থেকে পানি পান করতেন, যেহেতু রাজ্যে আর কোন কুয়ো ছিল না।
এক রাত্রে, যখন সবাই ঘুমে আচ্ছন্ন তখন এক ডাকিনী প্রবেশ করে শহরে; কুয়োর পানিতে সে অদ্ভুত ধরনের সাত ফোটা তরল ছেড়ে দেয় এবং বিড়বিড় করে বলে, “এই মুহূর্তে হতে যে এই পানি পান করবে সে বদ্ধ উম্মাদে পরিণত হবে
পরেরদিন সকালে , শুধু মাত্র রাজা এবং তার গৃহাধ্যক্ষ ছাড়া সবাই সেই কুয়োর পানি পান করল, এবং সকলেই ডাকিনীর কথামত পাগল হয়ে গেলো।
সেদিনই শহরের অলিতে গলিতে, বাজারে বন্দরে সবখানেই অধিবাসীরা সকল কাজকর্ম বাদ দিয়ে শুধু ফিসফিস করছিল, “আমাদের রাজা পাগল হয়ে গিয়েছেন। তিনি এবং তার গৃহাধ্যক্ষ সকল যুক্তি খুইয়েছেন। আমরা কোনভাবেই একজন পাগল রাজার অধীনে থাকতে পারি না, আমাদেরকে অবশ্যই তাকে সিংহাসনচ্যুত করতে হবে
ঐ সন্ধ্যাতেই রাজা আদেশ দিলেন তার স্বর্ণালী পানপাত্রটি দিয়ে কুয়ো থেকে পানি আনতে। অতঃপর রাজা এবং তার গৃহাধ্যক্ষক সেই পানি পান করলেন।
এবং অবশেষে উইরানি নামক ঐ দূরবর্তী শহরে আবারো শুরু হল আনন্দ উৎসব, কেননা, রাজা ও তার গৃহাধ্যক্ষ তাদের চেতনা ফিরে পেয়েছেন।

 

The Pomegranate
এককালে, যখন আমি এক ডালিমের মাঝে বসবাস করছিলাম, আমি শুনলাম এক বীজ বলছে, “এক সময় আমি এক শক্তিশালী বৃক্ষে পরিণত হব এবং বাতাস আমার ডালে গান গাইবে, সূর্য আমার পাতায় নাচবে এবং প্রতিটা ঋতু জুড়েই আমার সৌন্দর্য অটুট থাকবে
আরেকজন তখন কথা বলে উঠলো, “যখন আমি তোমার মতই তরুণ ছিলাম, আমিও এমন স্বপ্ন দেখতাম। এখন আমি বুঝি এবং জানি, আমার সকল আশাই ভেস্তে গেছে”!
তৃতীয়জন বলল, “আমিতো অদূর ভবিষ্যতে আমাদের জন্যে সম্ভাবনামূলক কিছুই দেখি না
চতুর্থজন বলল, “উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ব্যতীত আমাদের জীবন কি একটা উপহাসেই না পরিণত হবে!
পঞ্চম জন বলল, “যখন আমরা জানি ই না আমরা কি, তখন কি হব এটা নিয়ে কেন খামোখা তর্ক করছি?”
কিন্তু, ষষ্টজন উত্তর দিল, “আমরা যা আছি তাই থাকব
এবং সপ্তমজন বলে উঠল, ‘আমি খুব ভালো করে জানি কিভাবে কি হবে, কিন্তু ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না
তারপর অষ্টমজন বলল - পরে নবমজন পরে দশমজন এবং ধীরে ধীরে সবাই বলতে শুরু করল। এবং আমি কারো কণ্ঠ আলাদা করতে পারছিলাম না।
এবং ঐদিনই আমি একটা কুইন্সের ভিতরে প্রবেশ করি, যেখানে বীজের সংখ্যা ছিল অল্প এবং সবকিছু প্রায় নীরবই ছিল।

[কুইন্স নাশপাতির মতো একধরনের ফল]



On the strips of the temple
গত সন্ধ্যায়, মন্দিরের সিড়িতে দুই পুরুষের মাঝে আমি এক মহিলাকে বসে থাকতে দেখলাম।
মহিলার মুখাবয়বের এক পাশ ছিল বিষণ্ণ, অন্যদিকটা ছিল লজ্জায় আরক্তিম।



The grave-digger
একদা, আমার এক মৃত আত্মাকে কবর দিচ্ছিলাম, তখন এক গোরখোদক পাশে এসে বলল, “এখানে যতজন কবর দিতে আসে তাঁদের মধ্যে তোমাকেই আমার সবচেয়ে বেশী পছন্দ
শুনে খুব খুশি হয়েই বললাম, “কিন্তু কেন আপনি পছন্দ করেন?”
কারণ,” প্রত্যুত্তরে বলল সে, “সবাই কাঁদতে কাঁদতে আসে, কাঁদতে কাঁদতে যায়; শুধুমাত্র তুমিই আসার সময়ও হাস, যাওয়ার সময়ও হাস



The sleep-walkers
যে শহরে আমার জন্ম হয়েছিল সেখানে এক মহিলা তাঁর মেয়েকে নিয়ে বসবাস করতেন; এবং তারা দুইজনেই ঘুমের মধ্যে হাটাহাটি করতো।

এক রাতে, যখন পুরো পৃথিবী নীরবতায় ডুবে আছে, তারা দুজন ঘুমের মধ্যে হাটতে হাটতে তাঁদের কুয়াশাচ্ছন্ন বাগানে এসে মিলিত হল। এবং মা বলে উঠলেন, “অবশেষে, আমার শত্রুর দেখা পেলাম! তোর কারণে আমার যৌবন নষ্ট হয়েছে যে তার নিজের জীবন গড়েছে আমারটা নষ্ট করে। তোরে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছে!

এবার কন্যাটাও মুখ খুলল, “ আরে তুই সেই স্বার্থপর ঘৃণ্য বুড়ি! যে আমার নিজের জীবন ও স্বাধীনতার মাঝে দাঁড়িয়ে আছে! যে আমার জীবনটা তাঁর বিষণ্ণ জীবনের ছায়ায় গড়ে তুলছে! মরিস না কেন তুই?”

ঠিক এই সময় এক মোরগের ডাকে তাঁদের ঘুম ভেঙ্গে গেল।
মা খুব আদুরে গলায় বললেন, “এইটা তুমি, ডার্লিং?”
হুম মা!শান্তভরে জবাব দিল মেয়েটা।



The fox
সূর্যোদয়ের মুহূর্তে এক খেঁকশিয়াল নিজের ছায়ার দিকে তাকিয়ে ভাবল, “আজকে লাঞ্চের জন্যে একটা উট লাগবে!
সারাটা সকাল হন্য হয়ে উট খোঁজাখুঁজি করল এবং দুপুরে আবারো নিজের ছায়ার দিকে তাকিয়ে চিন্তা করল, “নাহ! ইঁদুরেই চলবে!



God
আদিকালে, যখন প্রথমবারের মত শব্দের কম্পনে আমার ঠোট কম্পিত হল, আমি আরোহণ করি পবিত্র পাহাড়ে এবং ঈশ্বরের সাথে কথা বলি, ‘প্রভু, আমি তোমার দাস। তোমার গোপন ইচ্ছাই আমার জন্যে আইন এবং আমি অবশ্যই তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করব
ঈশ্বর কোন উত্তর দিলেন না, এবং প্রবল ঝড়ের ন্যায় চলে গেলেন।
এবং আরও হাজার বছর পরে আমি আবারো সেই পবিত্র পাহাড়ে চড়ে ঈশ্বরের মুখোমুখি হই, ‘স্রষ্টা, আমি তোমারই সৃষ্টি। মাটি থেকে তুমি আমাকে গড়ন দিয়েছ এবং আমি সর্বোপরি তোমার কাছে ঋণী
এবং ঈশ্বর এবারো কোন উত্তর দিলেন না; এবং ক্ষিপ্রগতির ডানার ন্যায় চলে গেলেন।
আরও হাজার বছর পরে আমি আবারো চড়ি পবিত্র সে পাহাড়ে এবং ঈশ্বরের কাছে আবারো বলি, ‘পিতা, আমি তোমার পুত্র! কৃপা এবং ভালোবাসা দিয়ে তুমি আমায় জন্ম দিয়েছ এবং ভালোবাসা আর ভক্তি দিয়ে আমি তোমার রাজত্বের উত্তরাধিকারী হব
এবারো ঈশ্বর কোন উত্তর দিলেন না, দূর পাহাড়ের অবগুন্ঠনকারী কুয়াশার ন্যায় চলে গেলেন।
এবং হাজার বছর পরে আমি আবারো পবিত্র পাহাড়ে আরোহণ করি, ঈশ্বরের পানে চেয়ে বলে উঠি, ‘ঈশ্বর, তুমি আমার স্বপ্ন এবং আমার পূর্ণতা; আমি তোমার অতীত এবং তুমিই সৃষ্টি কর আমার ভবিষ্যৎ । পৃথিবীর বুকে আমি তোমারই মূল এবং তুমিই আকাশে ফোঁটাও আমার ফুল; এবং একসাথে আমরা সূর্যের সম্মুখে বেড়ে উঠি
এবং অতঃপর ঈশ্বর ঝুঁকে পড়লেন আমার দিকে এবং মৃদু কন্ঠে শোনালেন মাধুর্যের শব্দ। এমনকি তার নিচ দিয়ে প্রবাহিত যে ছোট নদী সেও আমাকে আলিঙ্গনে আবদ্ধ করল।
এবং যখন আমি নেমে আসি উপত্যকায়, সমতলের দেবতাকেও সেখানে দেখতে পাই।




The other language
আমার জন্মের তিনদিনের মাথায় আমার মা নার্সকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘আমার বাছাধন কেমন আছে?’
আমি তখন দোলনায় দোল খেতে খেতে অবাক বিস্ময়ে দেখছিলাম নতুন পৃথিবীটাকে। পাশে থেকে নার্স জবাব দিয়েছিল, ‘অবস্থা ভালো ম্যাডাম; তিন বেলা করেই খাওয়ানো হচ্ছে এবং ওর মতো উৎফুল্ল বাচ্চা আমি খুব কমই দেখছি।
কথাটা শুনে আমার খুব রাগ হচ্ছিল; কাঁদতে কাঁদতে মাকে ডাক দিলাম, ‘না, আমি ভালো নেই আম্মা! বিছানাটা খুব শক্ত, দুধটাও খেতে ভালো লাগছে না, আর স্তনের গন্ধটাও খুব বিচ্ছিরি!
কিন্তু, আমার কান্নার ভাষাটা তারা কেউই বুঝলো না; কেননা আমি কথা বলছিলাম অন্য জগতের ভাষায়!
জন্মের একুশ দিনের মাথায় আমাকে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষা দিয়ে আমার নাম রাখা হয়। যাজক যাওয়ার সময় আমার মাকে বলে গেলেন, ‘আপনি খুবই ভাগ্যবান যে, আপনার সন্তান জন্মগত ভাবেই একজন খ্রিষ্টান।
আমি অবাক হয়ে যাজকে বললাম, ‘ও! তাহলে তো তোমার স্বর্গীয় মা খুবই দুর্ভাগ্যবান! কেননা তুমি তো আর জন্মগত খ্রিষ্টান না।কিন্তু যাজকও আমার কথা বুঝলেন না।
আরও অনেক দিন পর এক জ্যোতিষীর সাথে আমার মায়ের দেখা হল। আমাকে দেখে সে ভবিষ্যৎবাণী করলো, ‘ও বড় হয়ে একজন রাজনীতিবিদ হবে, মানুষের নেতা হবে দেখবেন।
সাথে সাথে আমি তীব্র প্রতিবাদ জানালাম, ‘না, এটা ভুল! আমি বড় হয়ে মিউজিসিয়ান হব আর কিছুই না!
অবাক হয়ে খেয়াল করলাম, তখনো তারা কেউই আমাকে বুঝে নাই।
এই জ্যোতিষের সাথে আমার আবার দেখা হয়েছিল আরও তেত্রিশ বছর পর এক মন্দিরের সামনে; মা, নার্স, যাজক তারা কেউই তখন আর বেঁচে নেই। বেচারা আমাকে বললেন, ‘আমি জানতাম তুমি একদিন অনেক বড় মিউজিসিয়ান হবে! এমন কি তোমার শৈশবেই আমি এটা বলেছিলাম।
এবং, এই জ্যোতিষের কথা আমি সেদিন পুরোপুরিই বিশ্বাস করি। কেননা, অন্যজগতের সেই ভাষাটা এখন আর আমার মনে নেই, ভুলে গিয়েছি।



How I Became a Madman
জানতে চেয়েছিলে, কিভাবে আমি উন্মাদ হয়ে গিয়েছিলাম। ঘটনাটা এভাবে ঘটে
একদিন বহু দেবতার জন্মেরও অনেক পূর্বে গভীর এক ঘুম থেকে জেগে ওঠে আবিষ্কার করি আমার মুখোশ গুলো চুরি হয়ে গিয়েছে। আমার সাতটা মুখোশ, যা আমি সাত জনমে পরেছিলাম।
মুখোশহীন অবস্থায়, ‘চোর,চোর, অভিশপ্ত চোর!’ - চিৎকার করতে করতে আমি রাস্তায় দৌড়াতে থাকি। নারী পুরুষ সকলে আমাকে দেখে হাসতে থাকে এবং কেউ কেউ ভয়ে পালিয়ে যায় ঘরের দিকে।
এবং বাজারে ঢোকা মাত্রই দালানের উপর থেকে এক বালক চিৎকার করে বলল, ‘পাগল!
আমি উর্ধ্বনয়নে তাঁর দিকে তাকাই, এবং প্রথমবারের মতো সূর্য আমার উলঙ্গ চেহারায় চুম্বন করে। এতেই সূর্যের আলোতে ভালোবাসায় উদ্ভাসিত হয় আমার আত্মা এবং আমি মুখোশগুলোও আর চাই নি।
ধন্যবাদ চোর যে চুরি করেছ আমার মুখোশ! বলে আমি কাঁদতে থাকি।
এইভাবেই আমি হয়ে গেলাম পাগল।
এই পাগলামিতেই আমি পেয়েছি স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তা-
একাকীত্বের স্বাধীনতা এবং কেউ বুঝে ফেলার থেকে নিরাপত্তা, কেননা সেটা দাসত্বের শৃঙ্খল।
তবে, আমার নিরাপত্তা নিয়ে খুব একটা নিরাপদ-বোধ করি না, এমনকি কারাগারে একজন চোর আরেকজন চোরের কাছ হতে নিরাপদ।



The wise dog
এক বিড়াল দলের পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছিলেন এক বিজ্ঞ কুকুর। এবং, ব্যস্ত বিড়ালদের কেউই তাকে লক্ষ করে নি।
অতঃপর, দলের মধ্যস্থল থেকে বিরাটকায় এক গম্ভীর বিড়াল দাঁড়ালেন এবং সকলের উদ্দেশ্যে বললেন,
ভাইয়েরা, প্রার্থনা কর; যখনই কোন ধরণের সংশয় ছাড়া বারেবারে প্রার্থনা করবে, ঠিক তখনই ইঁদুর বৃষ্টিহবে!
এবং, এ প্রার্থনা শুনে মনে মনে হেসে উঠলেন সেই বিজ্ঞ কুকুর; তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বললেন,
হায়রে অন্ধ ও বোকার দল! এটা কি লেখা নেই এবং এটা কি আমাদের পূর্বপুরুষদের মাধ্যমে জানতাম না যে, বিশ্বাস ও প্রার্থনার মাধ্যমে যে বৃষ্টি হয় সেটাতে ইঁদুর নয়, বরং হাড় পাওয়া যায়!




The Eye
দূরের নীলাভ কুয়াশাচ্ছন্ন পাহাড়ের দৃশ্যে মোহিত দু চোখ বলে উঠল, ‘পাহাড়টা অসাধারণ, তাই না?’
মনোযোগ দিয়ে কান শোনার চেষ্টা করল – ‘কিন্তু, আমি তো কিছু শুনতে পাচ্ছি না!
স্পর্শের শত চেষ্টা করেও ব্যর্থ হাতও বলল, ‘কই? কিছুই খুঁজেই পাই না।
এবং নাক কোন গন্ধ না নিতে পেরে বলল, ‘কোন পাহাড় নেই; গন্ধই তো পেলুম না।
অতঃপর, আমার চোখ জোড়া দৃষ্টি ফেললো অন্যদিকে। এবং, সবাই মিলে চোখের এই অদ্ভুত বিভ্রম নিয়ে আলোচনা শুরু করলেন, ‘নাহ! চোখের কিছু একটা অবশ্যই হয়েছে!



No comments:

Post a Comment