জাতীয় জীবনে কিছু কিছু ঘটনা ঘটে যা সে ঘটনাত্তোর
যাবতীয় কর্মকাণ্ডকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে;
প্রাত্যহিক
জীবন থেকে শুরু করে শিল্প-সাহিত্য সবকিছুই সে প্রভাব-বলয়ের ভেতরে থাকে। কখনো ঘটনার
পটভূমি ও এর চেতনা জন্ম দেয় লেখক - কবিকে,
আবার
কখনো লেখক-কবিদের অস্তিত্বের বিরাট অংশ জুড়ে থাকে সেই ঘটনা। বাঙালির জীবনে বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন তেমনই এক
অভূতপূর্ব সময়, যা একদিকে আমাদের জন্যে সৃষ্টিশীল
ও মননশীল কাজের নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি করেছিলে, অন্যদিকে প্রতিবাদ করতে শিখিয়েছিল
সকল অন্যায়-শোষণের বিরুদ্ধে, প্রেরণা দিয়েছিল এক
নতুন রাষ্ট্রের জন্মদানে। সৈয়দ শামসুল হক তো তাদের প্রজন্মকে ‘ভাষা আন্দোলনের সন্তান’ বলেই চিহ্নিত করেছিলেন। বায়ান্ন’র ফেব্রুয়ারির সেই
ঐতিহাসিক ক্ষণে ১৪৪ ধারা ভঙ্গকারী প্রথম দশজনের মধ্যে একজন ছিলেন জহির রায়হান।
জহির রায়হানের সৃষ্টিকর্ম সম্পর্কে যে কোন আলোচনার শুরুতে এই তথ্য মাথায় গেঁথে
নেয়া উচিৎ; কেননা সে আন্দোলন তাঁর জীবনে
এত গভীর ছাপ ফেলেছে যে, হুমায়ূন আজাদ রায়
দিয়েছেন, জহির রায়হান সম্ভবত
বাংলাদেশের একমাত্র কথাসাহিত্যিক যার উদ্ভবের পেছনে আছে ভাষা আন্দোলন। যদি
বায়ান্নর একুশ না ঘটত তবে জহির রায়হান হয়ত কথাশিল্পী হতেন না।
জহির রায়হান নিজেও বলতেন, আমি যা কিছু সৃষ্টি করেছি তা একুশেরই দান। ভাষা আন্দোলন
নিয়ে প্রথম সার্থক উপন্যাস, ‘আরেক ফাল্গুন’, যেমন তিনিই লিখেছেন,
তেমনি ‘একুশের গল্প’ এবং ‘মহামৃত্যুর’ মতো ছোটগল্পও তিনি
রচনা করেছেন। আবার, তার জীবনের সেরা
চলচ্চিত্র ‘জীবন থেকে নেয়া’র সর্বাধিক দৃষ্টিনন্দন মুহূর্তও প্রভাতফেরীর দৃশ্যটা।
একুশের প্রথম প্রহরের মিছিলকারী হিসেবে জেলে গিয়েছেন; ভাষার জন্যে সেদিন প্রাণ দিতে পারেন নি বলে হয়তোবা একটা
আফসোসও ছিল। তাই দেখা যায় তপুর গুলি খাওয়ার পর রাহাত বলে, ‘তপু না মরলে আমি মরলেই ভালো হত’। ‘মহামৃত্যু’ গল্পে ‘ফুলের নিচে ডুবে গেলো
ওর লাশটা’ বাক্যতেই ভাষা শহীদদের প্রতি
তাঁর গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ প্রকাশ পায়। লাশটা সবাই যখন বহন করে নিয়ে যাচ্ছে, তখন শমসের আলীর মুখে আবারো সেই আফসোসের সুর শোনা যায়, ‘আমি কেন ওর মতো মরতে পারলাম না’।
জহির রায়হান নিজেকে ‘আবেগী’ মানুষ বলেই চিহ্নিত
করতেন। বলতেন যে, ‘আবেগের অঙ্কুর’ থেকেই তার জন্ম। আবেগের কারণেই তাঁর বেচে থাকা। যেদিন
আবেগের অবসান হবে, সেদিনই তাঁর মৃত্যু
ঘটবে। বলতেন, ‘আমার আবেগকে আমি প্রাণের
চেয়েও বেশি ভালবাসি’। তাঁর আন্দোলন, তাঁর সৃষ্টি সবকিছুর পিছনে থাকে এই আবেগ। বায়ান্নের ভাষা
আন্দোলনে তাঁর যে অংশগ্রহণ, সেটাও তাঁর মতে, আবেগের পুতুল হওয়ার কারণে। তাঁর জবানে, ‘সেদিন অপরাহ্ণে সে আমার মনে এক দুর্জয় সাহসের সঞ্চয় করেছিল।
সে বলেছিলো, ওই হিংস্র দানবের মুখোশগুলো
খুলে ফেল। ভেঙ্গে ফেল ফেরাউনের দুরাশার স্বর্গ। নইলে তোমার কণ্ঠ চিরতরে রুদ্ধ হয়ে
যাবে। আমি তক্ষুনি সাড়া দিলাম।’ আবেগ থেকেই সিনেমা
বানাতেন, গল্প লিখতেন, উপন্যাস লিখতেন। কেউ প্রশংসা করতো, কেউ নিন্দে করতো। তিনি বলতেন, ‘আমার কাছে দুটোই সমান। সমান অর্থহীন। কারণ ভালমন্দের বিচারে সময় শ্রেষ্ঠ বিচারক।’ এখন সময়ই বিচার করছে জহির রায়হানকে। (রায়হান,
১৯৬৭)
উপরে বর্ণিত জহির রায়হানের এই ‘আবেগ’ সমাজ ও বাস্তবতা বিবর্জিত ছিল না; সমাজের প্রতি দায়
থেকেই উৎপত্তি ঘটত এই আবেগের। আমাদের মতো শ্রেণিবিভক্ত সমাজে কি কি সমস্যা দেখা
দিতে পারে, সে বিষয়ে তিনি
ওয়াকিবহাল ছিলেন। তিনি জানতেন যে, শ্রেণি বিভক্ত সমাজেই কুসংস্কার ও ধর্মান্ধতা জন্মে ও বেড়ে ওঠে। এই কথাগুলো বরং তাঁর মুখেই শোনা
যাক, ‘কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধর্মান্ধ
সমাজে মুক্তবুদ্ধির চাষ করতে গেলেই বিরোধ বাধা স্বাভাবিক। শ্রেণিবিভক্ত সমাজে শাসক
ও শোষক শ্রেণি সবসময় মুক্ত বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিদের ঘৃণার ও সন্দেহের চোখে দেখে।
তারা চায় সবরকমের সংস্কারগুলো সমাজের সকল স্তরে নিষ্ঠার সঙ্গে লালিত-পালিত ও
রক্ষিত হোক। তাহলে তাদের খুব সুবিধে হয়’। (রায়হান,
__) তাঁর সৃষ্টিকর্মের পরতে পরতে তাই ছড়িয়ে আছে শ্রেণিবিভক্ত সমাজের
মানুষেরা।
জহির রায়হান ছিলেন রক্ত মাংসে চলচ্চিত্রের মানুষ; তার চিন্তা-চেতনায় ও খাতা – কলমে সর্বত্র জুড়ে ছিল চলচ্চিত্র। সিনেমার ভাষাতে কথা বলতেন, লিখতেন, এবং রচনা করতেন
গল্প-উপন্যাস। ছোট ছোট বাক্য বিন্যাসের মাধ্যমে ঘটনার প্রতিটা দৃশ্য এমনভাবে
জীবন্ত করে তুলতেন যেন পাঠক চলচ্চিত্রের দর্শকের মতোই সে ঘটনাকে দেখতে পারতেন। তাই
বলে পাঠক কখনো সাহিত্যের স্বাদ গ্রহণে ব্যর্থ হতেন না। শেষের দিকে এসে তিনি গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধ সবকিছুই ছোট ছোট বাক্য বিন্যাসেই লিখতেন।
অবশ্য জহির রায়হানের সাথে তার সমকালীন অন্যান্য চলচ্চিত্র পরিচালকদের সাথে সবচেয়ে
বড় পার্থক্য হচ্ছে তিনি শুধু সিনেমা বানাতে হবে এ কারণেই সিনেমা বানান নি, বরং তার ছিল স্পষ্ট রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি। আলমগীর কবির এক
আলোচনায় বলেছিলেন, ‘সে বিশ্বাস করত যে
শিল্পীর মহান দায়িত্ব হল আপামর জনসাধারণকে তাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তোলা, যাতে করে একদিন সত্যিকারের ক্ষমতা সংখ্যাগরিষ্ঠের
সত্যিকারের প্রতিনিধিদের হাতে আসতে পারে বিপ্লবের মাধ্যমে। এই আদর্শে অনুপ্রাণিত
হয়েই জহির এসেছিল চলচ্চিত্রাঙ্গনে।’ (কবির, ২০১৮) ‘কখনো আসেনি’তে একদিকে যেমন দেখা যায় শহুরে নিম্নবিত্ত কিংবা নিম্ন
মধ্যবিত্তের আর্থিক সংকট, আবার অন্যদিকে ‘জীবন থেকে নেয়া’তে দেখা যায় চলমান
রাজনৈতিক আন্দোলন। সে আন্দোলনের দৃশ্যায়ন রূপকরূপে হলেও সেটা এতই তীব্র ছিল যে
তাঁকে তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়তে হয়। সবসময় যে এমন সিনেমাই তৈরি করছিলেন, তা না। আর্থিক কারণে যখন বাণিজ্যিক সিনেমা বানাচ্ছিলেন তখনও
তার শৈল্পিক মনের তৃষ্ণা মেটাচ্ছিলেন ‘হাজার বছর ধরে’ লিখে, ‘ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি’ লিখে। ‘আমার ইচ্ছেগুলোকে
পায়রার পাখনায় উড়ে যেতে দাও আকাশে। কিম্বা সমুদ্রে ছুড়ে ফেলে দাও। সেখানে তারা
প্রাণভরে সাতার কাটুক’।
যে স্পষ্ট রাজনৈতিক চেতনার কথা বলেছিলাম, সেটা শুধু সিনেমা নির্মাণেই নয়, বিভিন্ন লেখাতেও ফুটিয়ে তুলতেন জহির রায়হান। আমাদের চলচ্চিত্রের বিভিন্ন সমস্যাবলী নিয়ে ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও সৎ চলচ্চিত্র নির্মাতার
দুর্গতি’ নামক এক প্রবন্ধে তিনি বিস্তারিত আলাপ করেছিলেন । সমস্যা
খুঁজেছিলেন তিনি সমাজের মধ্যেই। প্রশ্ন হচ্ছে, সেটা কোন সমাজ? জহির রায়হান এখানে
কোন রাখঢাক না রেখেই বলছেন এই সমাজ/দেশ হচ্ছে, ‘আধা-সামন্ততান্ত্রিক আর আধা-উপনিবেশিক’। তাঁর বর্ণিত এই সমাজে একজন
পরিচালক সিনেমা বানাতে গিলে যে
সমস্যাগুলোর মধ্যে পড়তে হয় তন্মধ্যে প্রথমেই আসে ‘অর্থ’, মানে টাকা। সৎ সিনেমার নিচে
টাকা পয়সাওয়ালারা সহজে টাকা খাঁটাতে চান না,
কেননা, এতে তাদের মুনাফায় টান পড়ে। অবশ্য, জহির রায়হান সকল টাকা পয়সাওয়ালাদেরই ‘অসৎ’ বলছেন, কারণ, তাঁর মতে, ‘সৎপথে কোনোদিনও ধনবান হওয়া যায়না’। তবুও, টাকা পয়সা জোগাড় করে যখন
পরিচালক সিনেমা বানানোতে হাত দেন তখন আবার সমাজ তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে যায়।
জহির রায়হানের মতে, সৎ চলচ্চিত্রের প্রাথমিক শর্ত হচ্ছে সংকীর্ণতা ও গোঁড়ামি হতে
মুক্ত হতে হবে। কিন্তু, শ্রেণি বিভক্ত সমাজে
সেটাও সম্ভব হয় না। সেই সাথে রাষ্ট্র তৈরি করে রাখে আইনের মারপ্যাঁচ। তাই দেখা যায় শাসক শ্রেণি ‘সমস্ত প্রাগৈতিহাসিক রীতিনীতি এবং সংস্কারগুলোকে রক্ষা করার
জন্য’ তৈরি করে সেন্সর বোর্ড।
সমস্যা এখানেই শেষ নয়। এরপর পরিচালকের চলচ্চিত্র
পড়ে পরিবেশকের হাতে, যাদের নাম তিনি
দিয়েছেন, ‘দালাল’। সরাসরি
বলে ফেলেন, ‘এই দালালি ব্যবসাটা এমন এক
ব্যবসা যার সঙ্গে সততার সম্পর্ক হচ্ছে একবারেই বিমাতাসুলভ। তাই সৎ চলচ্চিত্র
নির্মাতাদের সঙ্গে প্রায় দেখা যায় এদের একটা না একটা লড়াই লেগেই থাকে।’ এদের সাথে লড়াই করেও মনে করেন সিনেমা আসল দর্শকের সামনে, তখন নির্মাতাকে পড়তে হয় আরেক সমস্যায়। সমস্যা তখন খোদ ‘দর্শক’। প্রথমেই শুনে অবাক লাগতে পারে
এই কারণে যে, যে দর্শকের জন্যে চলচ্চিত্র
নির্মাণ করা হল তারাই কিভাবে আমার সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়। জহির রায়হান সেটাও
দেখিয়েছেন। এই দেশে দর্শকরা মূলত মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণি থেকেই আগত যাদের
সম্পর্কে জহির রায়হানের মূল্যায়ন হচ্ছে,
‘অভাব
হল যাদের নিত্য সহচর। অর্থের অভাব। শিক্ষার অভাব। অনগ্রসরতা থেকে সৃষ্ট চেতনার
অভাব। সেই কারণে মূল্যবোধের অভাব, জীবনবোধের অভাব। একজন
চলচ্চিত্র নির্মাতার দৃষ্টি থেকে দর্শকের যে অভাবটা সবচেয়ে বেশি প্রকট সেটা হল
চলচ্চিত্র সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব।’
তাই,
দেখা
যায় জহির রায়হান বলছেন, ‘আমাদের মত আধা-সামন্ততান্ত্রিক
আর আধা-উপনিবেশিক দেশে একজন সৎ চলচ্চিত্র নির্মাতার দুর্গতির সীমা থাকে না।’ তাঁর মতে, অর্থ, সমাজ, সংস্কার, ধর্মান্ধতা, রাজনৈতিক সংকীর্ণতা ও শিক্ষাগত অনগ্রসরতাই এই দুর্গতির
কারণ। এই শিক্ষাগত অনগ্রসরতার কারণেই দেখা দেয় সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক চেতনার অভাব
এবং জীবনবোধের অভাব। তবে জহির রায়হান আবেগী মানুষ। তাই, তিনি স্বপ্নবান মানুষ। জানেন মানুষ এই সীমাবদ্ধতার বিরুদ্ধে
লড়বে। তিনি যখন সিনেমা বানাচ্ছিলেন, কিংবা লেখালেখি
করছিলেন তখন বাংলার মানুষরা লড়ছিল, ফুঁসে উঠছিল বিদেশি
শাসকদের বিরুদ্ধে, তৎকালীন ব্যবস্থার
বিরুদ্ধে। সেই লড়াইটা দেখেই বোধহয় তখন তিনি বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের লোক তাই আজ ওই দেয়ালগুলো ভাঙ্গার জন্যে লড়ছে।’
২
একাত্তরে জহির রায়হানকে হারানো আমাদের জন্যে যে
কতবড় ক্ষতি ছিল সেটা যেমন তার অসমাপ্ত দুটো কাজের দিকে নজর দিলে টের পাওয়া যায়, তেমনি তার পরবর্তী সময়ে আমাদের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির দিকে
চোখ তুলে তাকালেও হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যায়। বাহাত্তরেই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চারটি
চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছিল, অথচ মুক্তিযুদ্ধের
চেতনার সূতিকাগার ‘বায়ান্ন’ কেন্দ্রিক সিনেমা আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে একেবারেই অনুপস্থিত।
এবং, বায়ান্ন নিয়ে সিনেমা বললে
আমরা এখনো জহির রায়হানের কাছেই হাত পাততে হয়। ভাষা আন্দোলন নিয়ে পূর্ণাঙ্গ একটা
সিনেমা তৈরির পরিকল্পনা তিনি হাতে নিয়েছিলেন সেই ১৯৬৬ সালেই। ছবির চরিত্র নির্বাচন
পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিলো। ছবির নাম ঠিক করা হয়েছিল ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’। পরবর্তীতে সেই কাজ আর এগোয়নি।
এ প্রসঙ্গে ‘৭০ সালের মার্চে এক
সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন যে, তদানীন্তন সরকারী মহল
থেকে অনুমতি পাননি বলে ছবিটা করতে পারেন নি। তাই সময় নিচ্ছেন। যখন বিনা বাধায় করা
যাবে তখনই করবেন। (হায়াৎ, ২০০৭)
পরবর্তীতে শাহরিয়ার কবিরের চাপাচাপিতে ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’র চিত্রকাহিনী
প্রকাশিত হয়েছিল মাসিক ‘সমীপেষু’তে এবং বর্তমানে আমরা জহির রায়হানের যে ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’
পড়ে
থাকি সেটা মূলত সেই চলচ্চিত্র, যা জহির রায়হানের
অন্যতম ‘অসমাপ্ত’ কাজের একটি।
কাহিনীর প্রথমেই পাওয়া যায় কৃষক গফুরকে, যে নিজের বিয়ের বাজার করবে বলে ঢাকা শহরে এসেছে এবং ‘হরতাল’ নামক আজব জিনিস দেখার
জন্যে রাতেও থেকে যায়। এরপর পাওয়া যায় আহমেদ হোসেনকে, যিনি পুলিশের লোক এবং তার ছেলে তসলিম সরকারবিরোধী
ছাত্ররাজনীতি করে বলে তার প্রোমোশনটা আটকে আছে। এককালের কবি আনোয়ার হোসেন এখন
কেরানি, যিনি চাকরি হারানোর ভয় থাকা
সত্ত্বেও ছাত্রদের হরতালকে সমর্থন দেন। তার স্ত্রী গৃহিণী, নিজের সংসারের ভালমন্দ ছাড়া আর কিছু সম্পর্কে খুব একটা
আগ্রহও নেই, উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করা হবে
শুনে যিনি আঁতকে উঠেন, ‘সে কিগো! আমরা তাহলে
কোন ভাষায় কথা বলবো?’ অর্থ ও প্রাচুর্যের
অফুরন্ত সমাবেশের মকবুল আহমেদকে বলতে দেখা যায় ‘বাংলা কি মুসলমানের ভাষা নাকি? ওটাতো হিন্দুদের ভাষা’। সবশেষে
পাই রিকশাচালক সেলিমকে যার স্বপ্ন একটা রিকশা কেনার, যিনি রুজি রোজগারের জন্যে হরতালের বিরোধী, আবার বাংলা বিষয়েও দরদি। এদের সবাইকে পাওয়া যায় একযোগে একস্থানে ফেব্রুয়ারির
একুশ তারিখ, তন্মধ্যে গফুর, তসলিম ও আনোয়ারকে আমরা হারিয়ে ফেলি চিরতরে।
‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ কে যদিও উপন্যাস হিসেবে দাড় করানো হয় নি এবং সিনেমার
চিত্রকাহিনী হিসেবেই লেখা তবু এর তাৎপর্য বহু বিস্তৃত। লেখা যথারীতি তাঁর নিজস্ব
ভঙ্গিতেই ছোট ছোট বাক্য বিন্যাসে লেখা। গল্পের কাঠামোতে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, শ্রমিক ও কৃষক -
সকলের অন্তর্ভুক্তি জহির রায়হানের বাস্তবতাকে উপলব্ধি ও বিচার বিশ্লেষণ করার
ক্ষমতার প্রমাণ দেয়। ভাষা আন্দোলনটা যে শুধুমাত্র ছাত্রদের মধ্যেই আটকে থাকেনি, বরং ছড়িয়ে পড়েছিল সর্বক্ষেত্রে সেটার প্রমাণ পাওয়া যায়
বদরুদ্দীন উমরের কথাতেই, ‘দ্বিতীয় পর্যায়ে
(১৯৫২) ভাষা আন্দোলন শুধু ভাষার প্রশ্নে সীমাবদ্ধ না থেকে তা
শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-বুদ্ধিজীবী ও মধ্যবিত্তের এক ব্যাপক গণপ্রতিরোধ আন্দোলনে
রূপান্তরিত হয়ে সমগ্র পূর্ব বাংলায় এক অভূতপূর্ব আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।’ জহির রায়হানের উপন্যাসের চরিত্রগুলো এই গবেষণার পথ ধরেই
চলেছে, যদিও উপন্যাস রচিত হয়েছে
বদরুদ্দীন উমরের গবেষণারও আগে। ভাষা আন্দোলনে যারা শহিদ হয়েছেন তাদের জীবনের দিকে
তাকালে দেখা যায়, বরকত ছিলেন ছাত্র, জব্বার পিতার সাথে কৃষিকাজ করতেন, আব্দুস সালাম ছিলেন সেক্রেটারিয়েটের পিয়ন। ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’তে যারা মারা যাচ্ছেন
সেই গফুর যেন জব্বার, সেই তসলিম যেন বরকত, সেই আনোয়ার যেন আব্দুস সালাম। কৃষক গফুর, পুলিশ আহমেদ হোসেন,
ছাত্র
তসলিম, সরকারী কেরানী আনোয়ার হোসেন, পুঁজিপতি মকবুল ও রিকশাচালক সেলিম – সকলেই সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির প্রতিনিধি এবং একুশে
ফেব্রুয়ারিতে তাদের সবাইকে জড়ো করা হয়েছে একই স্থানে যেখানে গুলি করা হচ্ছে। যে
গুলির শব্দ শুনে ‘কাকগুলো চিৎকার
থামিয়ে পরস্পরের মুখের দিকে তাকালো। তারপর একটা কাক ভয়ার্ত ডানা মেলে আকাশে উড়লো’।
অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ‘পাকিস্তান আন্দোলনে’র অংশীদার বাঙালি মুসলমানেরা নিজেদের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের সাথে
বাস্তবতার ফারাক দেখে কিছুদিনের মধ্যে পাকিস্তান সৃষ্টির তত্ত্বকেই চ্যালেঞ্জ করে; আবার অন্যদিকে যারা শাসকদের পদলেহনের মাধ্যমে ও শ্রমিকদের
শুষে নিজেদেরকে বিত্তশালী করতে সমর্থ হয়েছিলেন তারা কিন্তু ঠিকই পাকিস্তানকে আঁকড়ে
ধরে রাখতে চাইতেন এবং সমসময় তাই করেছিলেন। বায়ান্নতে, ঊনসত্তরে এবং একাত্তরে। গল্পেও দেখা যায়, ভাষা আন্দোলনের বিপক্ষে সক্রিয় মকবুল সেই শ্রেণীরই
প্রতিনিধি যিনি বলেন, ‘তবু যদি না মানে
(সরকারী সিদ্ধান্ত) চাবুকটাকে তুলে নিতে হবে হাতে। মানবে না কি? মানতে বাধ্য হবে তখন’।
ভাষার জন্যে বাঙালি রা যে রাজপথে নেমেছিল সেটার
পরিধি দিনে দিনে শুধু বেড়েছে। এক-জায়গায় স্থির না থেকে বাঙালি বরং সামনে এগিয়েছে; যে আন্দোলন শুরু করেছিল ভাষার জন্যে সেটাই স্বায়ত্তশাসন হয়ে
একেবারে স্বাধীনতার সদর দরজায় এসে পৌঁছায়। অনেকটা ‘ঝরনা এখন নদী হয়ে ছুটে চলেছে সাগরের দিকে’র মতো। ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’র ঘটনা বায়ান্নের সেই মহা দিনটাকে কেন্দ্র করে; তবে সেটা একদিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং, চরিত্রগুলোর বৈশিষ্ট্য বিচার করলে বাংলাতে গড়ে ওঠা যে কোন
আন্দোলনের এক সর্বজনীন চিত্র ধরা পড়ে। ঊনসত্তরের আন্দোলন কিংবা স্বাধীনতা উত্তর
বাংলাদেশের স্বৈরাচারী বিরোধী আন্দোলনেও এই চরিত্রগুলোর একই ধরনের কর্মকাণ্ড
লক্ষ্য করা যায়। ছাত্ররা তসলিমের মতোই সকল হুমকিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায়, আবার শোষকরূপে হাজির পুঁজিপতিরা তাদের ভাড়াটে পুলিশ
বাহিনীকে ব্যবহার করে সে জাগরণটাকে থামাতে। প্রতিটা দৃশ্যই পূর্বেও যেমন ছিল, এখন তেমনি আছে। ভাষা ও চরিত্র কিছুই বদলায় নি। সীমার মধ্যেও
অসীমকে ধরার এই বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে বিবেচনা করলে জহির রায়হানের এই সৃষ্টিকে মহৎ
বলা যায়।
ভাষা আন্দোলনের চেতনা যেমন আমাদেরকে ধর্মীয়
পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের কারাগার থেকে বের করে ধর্মনিরপেক্ষ বাঙালি জাতীয়তাবাদে প্রবেশ করায়, যা কিনা আমাদের
পরবর্তী সকল আন্দোলনের প্রেরণার উৎস ছিল,
তেমনি
এর অন্য একটি চেতনাও রয়েছে, যা বৈশ্বিক। আন্দোলন
চলাকালীন সময়ে যারা উর্দুর পক্ষে গলা ফাটাচ্ছিলেন, তাদের কথাবার্তায় কখনোই যুক্তির লেশমাত্র ছিল না। সর্বদাই বাংলার পক্ষে
আন্দোলনকারীদেরকে নোংরা ভাষায় তীব্র আক্রমণ করা হয়েছে। তাদেরকে হিন্দুদের দালাল
বলা হয়েছে, ইসলামের শত্রু বলা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক বিষ বাষ্পে পরিপূর্ণ বক্তৃতা
দেয়া হয়েছে। সেই সাথে বাংলাকে আখ্যায়িত করা হয়েছে হিন্দুয়ানী ভাষা হিসেবে। অপরদিকে
বাংলা ভাষার জন্যে আন্দোলনকারীরা কখনোই উর্দুকে আক্রমণ করে কোন কথা বলেন নি, বরং তাদের শ্লোগান ছিল, বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা দিতে হবে। ‘একুশের ফেব্রুয়ারি’তে দেখা যায়, তসলিম বলছে, ‘উর্দুর সঙ্গে আমাদের
কোন বিরোধ নেই। আমরা উর্দু-বাংলা দুটোকেই সমানভাবে চাই’। এই
যে শ্রদ্ধাবোধ সেটা নির্দিষ্ট কোন ভাষার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং সেটা পৃথিবীর প্রতিটা মানুষের মাতৃভাষার প্রতি সমান
সম্মানপ্রদর্শন এবং সেই সাথে যে কোন মাতৃভাষার ওপর আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে তীব্র
প্রতিবাদ। এ কারণে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার
জন্যে ১৯৯৮ সালে যখন জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে প্রথম প্রস্তাব করা হয়, তখন সেখানেও বিভিন্ন মাতৃভাষার বিরুদ্ধে এই ‘আধিপত্য’র প্রসঙ্গ এসেছে, ‘The Bengalis have played a very important role
in protecting their mother language form serious crisis related to its
existence. In today’s world there are many nation or communities still facing
serious crisis and threat against their mother Language’। অবশ্য, জাতিসংঘের এই ঘোষণার
মধ্যেও একটা ফাঁকি রয়েছে, এবং সেটাকে আড়াল করে
রাখা হচ্ছে রাজনৈতিকভাবেই। প্রস্তাবে বলা হচ্ছে যে, মাতৃভাষা রক্ষা করতে বাঙালিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। প্রকৃতপক্ষে
বায়ান্নের আন্দোলন মাতৃভাষা রক্ষার জন্যে ছিল না, বরং, এটা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের
মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলন। পাকিস্তানের সাথে বিরোধ মাতৃভাষা নিয়ে ছিল
না, ছিল রাষ্ট্রভাষা নিয়ে। অথচ, বর্তমানে আমাদের উদযাপন ও স্মরণে একুশে ফেব্রুয়ারি হয়ে গেছে
‘মাতৃভাষা আন্দোলন’, এবং, উদযাপনের এই রীতি
মোটেও শ্রেণি নিরপেক্ষ নয়!
চোখ কান খোলা রাখলে টের পাওয়া যায়, ভাষাভিত্তিক জাতিরাষ্ট্র গঠিত হওয়ার পরও বাংলাদেশে বাংলা ‘রাষ্ট্রভাষা’ হিসেবে তার যথাযথ
সম্মান পাচ্ছে না; বরং ইংরেজির আধিপত্যই
বেড়ে চলছে। যে কোন ভাষা তার রাষ্ট্রে সম্মানজনক অবস্থায় আছে কি না তা বুঝার জন্যে মোহাম্মদ
আজম তিনটা ক্ষেত্রের দিকে লক্ষ্য রাখতে বলেছিলেন। ‘এক, উচ্চশিক্ষায় ভাষাটা ব্যবহার হচ্ছে কি না। দুই, উচ্চ আদালতে ব্যবহার হচ্ছে কি না। তিন, দপ্তরে—যেখানে সম্মানসূচক
কিংবা মর্যাদাবাচক যোগাযোগ করতে হয়, সেখানে ভাষাটা
ব্যবহার হচ্ছে কি না।’ এই তিন ক্ষেত্রেই যে বাংলার ব্যবহার হয় না, এই
ব্যাপারেও তিনি নিশ্চিত। তাই তিনি বলেন, ‘বাংলার মর্যাদা নিয়ে এখানে যা কিছু বলা
হয়, সবই বাখোয়াজি। কোথাও বাংলা
নেই।’ অবশ্য বাংলাকে ব্যবহার না করে
চতুর্দিকে ইংরেজির এই জয়জয়কার কেন তাঁর উত্তর পাওয়া যাবে আমাদের শ্রেণিবিভক্ত সমাজের দিকে তাকালেই। বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির ছাত্র আন্দোলন, উনসত্তরের গণ অভ্যুত্থান, একাত্তরের
মুক্তিযুদ্ধ - সবগুলো আন্দোলনেই যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের সিংহভাগই ছিলেন
নিম্নবিত্ত। কিন্তু যারা ক্ষমতার শীর্ষে আরোহণ করেছিলেন তারা ছিলেন ইংরেজি জানা
ভদ্রলোক, তাই তারা ‘বাঙলা’য় কথা বলা সাধারণ
জনগণের সাথে নিরাপদ দূরত্ব তৈরির হাতিয়ার হিসেবে ইংরেজিকে সবজায়গায় গুরুত্ব দেন।
জনগণের মুখের ভাষা হতে উপরতলার মানুষের এই যে দূরত্ব তার প্রমাণ ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’র চরিত্রগুলোর শ্রেণি
বিশ্লেষণ করলেও পাওয়া যায়। ভাষার রাজনৈতিক অঙ্গীকারের বিষয়ে মোহাম্মদ আজম তাই
যথার্থই বলেন, ‘রাষ্ট্রের ক্ষমতা কোন শ্রেণির
হাতে থাকবে, তারা নিজের আর নিজের
সন্তানদের ভবিষ্যৎকে কীভাবে দেখে—এগুলোর সঙ্গে যুক্ত।
আপনি যে রাষ্ট্র চালান বা যে কাঠামো পরিচালনা করেন, তাতে আপনি কাকে অন্তর্ভুক্ত করবেন,
কাকে
বাইরে রাখবেন, তার সঙ্গে যুক্ত।' (প্রথম আলো, ২০১৮) এবং, সত্য কথা হচ্ছে, ষোল কোটি মানুষের
মুখের ভাষাকে মর্যাদা দিতে না পারলে আমাদের উন্নতিও সম্ভব না; আর তখন উন্নতি ঘটলে সেটা নির্দিষ্ট একটা শ্রেণির ঘটবে।
৩
এই আলোচনার সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ঘটনাটা হচ্ছে, জহির রায়হান এই অসাধারণ কাহিনীর সিনেমাটা তৈরি করে যেতে
পারেন নি। এরপর বাঙালির জীবনে যে শূন্যতা
তৈরি হয়েছে তার গভীরতা যে কতটুকু এর প্রমাণ হচ্ছে আমরা স্বাধীনতার পঁয়তাল্লিশ বছর
অতিক্রম করে ফেললেও আমাদের জীবনের প্রথম স্বর্ণালী মুহূর্তটাকে এখনো রুপালি ফিতাতে
তুলে আনতে পারি নি। সাহিত্য বলেন আর সিনেমা বলেন বায়ান্ন আসলেই আমাদের হাজির হতে হয় জহির রায়হানের কাছে। জহির রায়হান সিনেমাটা শেষ
করতে পারেন নি, তাই বোধহয় এ নিয়ে আর কোন
সিনেমাই তৈরি করা সম্ভব হয় নি।
একাত্তরের ১৮ ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত এক
সাক্ষাৎকারে জহির রায়হান বলেছিলেন, ‘আগামী গণতান্ত্রিক
সরকারের উচিৎ হবে একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে নিজেদের তাগিদে একটা ছবি করা। বাংলার
জন্যে যাদের প্রাণ এত কাঁদে, তারা একুশে
ফেব্রুয়ারির উপর একটা ছবি করবে না, যে একুশেতে বাংলা
পুনর্জন্ম লাভ করেছে। তাদের প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব তো হবে এটা’। সেদিন
তিনি আরও বলেছিলেন, ‘একুশের ওপর ছবি করা
আমার জীবনের অন্যতম প্রধান বাসনা’। উপরোক্ত দুটো বাসনার কোনটা কি
পূর্ণ হয়েছে? আমাদের দায়িত্বটা কি আমরা
পালন করতে পেরেছি? হাজার বছরের পুরনো
রাতটা কিন্তু বেড়েই চলছে!
সূত্রঃ
[১] জহির রায়হান, ১৯৬৭, আমি, সংস্কৃতি ডটকম। লিংক
- http://sangskriti.com/zahir-raihan/
[২] জহির রায়হান, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও সৎ চলচ্চিত্র নির্মাতার দুর্গতি , সংস্কৃতি ডটকম। লিংক - http://sangskriti.com/bangladesher-cholochitro-jahir-raihan/
[৩] আলমগীর কবির, ২০১৮, চলচ্চিত্র
ও জাতীয় মুক্তি, আগামী প্রকাশনী
[৪] প্রথম আলো, ভাষা নিয়ে কথোপকথন রাষ্ট্রভাষা না মাতৃভাষা, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮।
No comments:
Post a Comment