Tuesday, September 4, 2018

'তৃতীয় পক্ষ' বনাম দুই পক্ষের রাজনীতি



কিন্তু আমরা এখন যেটা দেখতে পাচ্ছি, সেটা আরও ভয়ানক। এর ভেতরে তৃতীয় পক্ষ চলে এসেছে।’ - মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। 

দুই শিক্ষার্থীর সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়াকে কেন্দ্র করে স্কুলের শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন শুরু করেছিল সেটা একদিকে যেমন ঢাকা থেকে শুরু করে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল, তেমনি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকেও শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনে শরিক করতে পেরেছিলেন। সরকার প্রথমে এই আন্দোলনকে আমলে না আনলেও দু একদিনের মাথায় এই আন্দোলনকে আমলে নিতে বাধ্য হয়েছিল, এবং ধীরে ধীরে হুমকি ধমকি দেয়াও শুরু করেছিল। রাস্তায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কিছু হলে সরকার দায়ী থাকবে না এমনও হুশিয়ার বাণী উপরের মহল থেকে আসা শুরু হয়। এই কথাগুলো এবং পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশি ও দলীয় আক্রমণ প্রমাণ করেছিল যে সরকার শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন সরকার সরকারবিরোধী আন্দোলনহিসেবেই নিয়েছিল এবং ভয়ও পেয়েছিল।

শিক্ষার্থীদের  আন্দোলন যখন বেগবান হয়, ঢাকা শহরের রাস্তাকে তারা আক্ষরিক অর্থেইনিয়ন্ত্রণ করা শুরু করে তখন ক্ষমতাসীন দল তাদের তৃতীয় পক্ষনামক হাতিয়ার নিয়ে হাজির হয়। দলের অন্ধ ভক্ত, মোসাহেব, সমর্থক থেকে শুরু করে এমনকি প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত এই তৃতীয় শক্তির কথা আওড়াতে থাকেন। উপরের প্রধানমন্ত্রীর যে উক্তি তুলে ধরা হয়েছে সেটা ৫ আগস্ট গণভবনে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন। এই তৃতীয় পক্ষের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘তৃতীয় শক্তি এরা মানুষ না। এরা পারে না এমন কোনো কাজ নেই। অগ্নি-সন্ত্রাস সৃষ্টিকারীরা যে কোনো অঘটন ঘটাতে পার। ঢাকার বাইরে থেকে লোক নিয়ে আসছে এখানে। তাদের কাজটা কি হবে? সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করা। যখনই আমি এটা দেখলাম তখনই আমি আতঙ্কিত এই শিশুদের নিয়ে।’ এর ঠিক একদিন আগে  আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসাহেবও একই ধরণের আশংকার কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের উদ্বেগটা হচ্ছে, যৌক্তিক ইনোসেন্ট আন্দোলনের মধ্যে যখন রাজনৈতিক অপশক্তির অনুপ্রবেশ ঘটে। এই আন্দোলনে এই পর্যন্ত আমরা বার বার খবর পাচ্ছি রাজনৈতিক অনুপ্রবেশ ঘটছে।তিনি আরো বলেন, “সন্ধ্যার পরে এই কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা যখন বেশি থাকে না, তখন এদের মধ্যে এই অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকে যায়। তখন তাদেরকে বাস ভাংচুরের উসকানি দেওয়া হয়   দেশকে অস্থিতিশীল করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপপ্রয়াসে লিপ্ত হয়েছে। যারা অরাজনৈতিক শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক আন্দোলনে রাজনৈতিক রং চড়াতে চায়, তাদের ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকার জন্য আমরা অনুরোধ করছি।নৌপরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান উষ্কানিদাতা এই তৃতীয় পক্ষের নাম সরাসরি বলেই ফেলেছেন। তিনি বলেন, ‘ দেশের বিভিন্ন সময়ে সংগঠিত হওয়া অন্যদের আন্দোলনে বিএনপি প্রবেশ করে শুধু উসকানি দেয়। হেফাজতের আন্দোলন থেকে শুরু করে, কোঠা আন্দোলন, এমনকি বাসচাপায় দুই ছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে শেখ হাসিনা সরকার পতনের চেষ্টা চালাচ্ছিল বিএনপি, যা কখনোই বাস্তবায়ন হবে না।' 

প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং নৌপরিবহনমন্ত্রী তাদের কথাকে আমরা বেশ গুরুত্ব সহকারেই গ্রহণ করি, কেননা তারা যা বলেন সমর্থক ও মোসাহেবরা তাই জপতে থাকেন দিনে রাতে। তিনজনের বক্তব্যেই আন্দোলনকারী ছাত্রদের কিশোরবা ইনোসেন্টইত্যাদি আদুরে শব্দ ব্যবহার করে সম্বোধন করা হয়েছে। এই শব্দগুলো দিয়ে আন্দোলনকারী ছাত্রদের প্রতি তাদের সমর্থনের কথাটা প্রকাশ করার একটা চেষ্টাও আছে। দাবি-দাওয়া মানা হবে কি হবে না এই বিষয়ে কোন আলোকপাত না করে বরং আমাদের শিশুইত্যাকার আদুরে নামে ডাকার দিকেই তাদের আগ্রহও লক্ষণীয়। সেই সাথে তারা আশংকা প্রকাশ করেছেন তৃতীয় পক্ষ নিয়ে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষ হাজির করার খুব একটা দরকার পড়ে নাই, বরং আন্দোলনকারীদের দেদারছে রাজকার বলা হয়েছে, ‘স্বার্থপর আন্দোলনবলা হয়েছে। কিন্তু নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষর উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়!

সরকারদলীয় নেতৃত্ব ও সমর্থকদের কারণে তৃতীয় পক্ষ  শব্দটা বাজারে বেশ চাউরও হয়েছে। ছাত্ররা আন্দোলনে নামলেই আসমান-জমিন ফুঁড়ে 'তৃতীয় পক্ষ' এসে হাজির হয়। যে কোন আন্দোলনের প্রথম দিন থেকেই একদল আশংকা করতে থাকেন এই বুঝি তৃতীয় পক্ষ ঢুকে পড়লো! এবং কেউ কেউ এই আশংকা থেকে প্রথম থেকেই আন্দোলনেরই বিরুদ্ধে থাকেন! এতেই  বুঝা যায় তৃতীয় পক্ষের শক্তির জোর কতটা!  যেহেতু তৃতীয় পক্ষ আছে, তাঁর মনে আরো দুই পক্ষের অস্তিত্বও আছে। এখানে অবধারিত ভাবে প্রথমপক্ষ হচ্ছে সরকার/রাষ্ট্রের ক্ষমতায় যারা আসীন, আর দ্বিতীয় পক্ষ হচ্ছে সাধারণ জনগণ কিংবা যারা দাবি-দাওয়া নিয়ে রাস্তায় নামে। আমাদের রাষ্ট্র যে তার জনগণকে নিজের বলে মনে করে না, এর একটা বড় নমুনা হচ্ছে এই দুই পক্ষের সৃষ্টি হওয়া। অবশ্য রাষ্ট্র ও সমাজ সর্বদাই দুই পক্ষ! এখন আসে তৃতীয় পক্ষের প্রশ্ন, এরা কারা? বারেবারে এসে এরা হাজির হয়। এই তিন নম্বর পক্ষ হচ্ছে আরেকদল যারা 'ক্ষমতার স্বাধ' থেকে বঞ্চিত, কিন্তু তারাও ক্ষমতাও চায়। তাই প্রথম ও তৃতীয় পক্ষ যেমন একে অপরের শত্রু, তেমনি আবার বন্ধুও বটে। এই দুই পক্ষই তাদের বাহিনী ও পুলিশকে ব্যবহার করে দ্বিতীয় পক্ষের দাবি দাওয়া দমন করতে। এই দাবি-দাওয়া দমন করতে প্রথম পক্ষের যেমন তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতি দরকার, তেমনি তৃতীয় পক্ষেরও দরকার প্রথম পক্ষের। তাদের মধ্যে একধরণের মিথোজীবী সম্পর্ক তৈরি হয়, যা দিয়ে আসলে জনগণকে ধোঁকা দেয়, মারধর করে, তারপর বলে, তোমাদের জন্যই এইসব করলাম। উপনিবশকরা যেমন করে বলত, আমি তো তোমাদের সভ্য বানানোর জন্য শাসন করছি, তেমনি আমাদের এই দুই পক্ষ কিংবা আমাদের এই রাষ্ট্রও বলে, আমি তোমাদের ভালোর জন্য, গণতন্ত্র রক্ষার জন্য তোমাদেরকে জেলে পুরছি, মারধর করছি। সবই তোমাদের ভালোর জন্যে। তাই দেখা যায় আন্দোলন দমানোর সময় স্বৈরাচারী শাসক হিসেবে পরিচিত এরশাদ যা বলেন তার সাথে গণতন্ত্রীদের কথার খুব একটা তফাৎ পাওয়া যায় না। এরশাদ যেমন করে বলতেন সন্ত্রাসে ছাত্রদের উস্কানি দেয়া হচ্ছে, এখনকার গণতন্ত্রী নেতারাও একই কথা বলেন। ছাত্র আন্দোলন দমনে সকলের মুখের ভাষা এক হয়ে যায়।

ছাত্রদের এই আন্দোলন কেন দমে গেল, এর উত্তরে সরকারদলীয় সমর্থকেরা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তৃতীয় পক্ষের কাহিনী নিয়ে আসছেন। তারা বলা শুরু করেছেন যে, অভিভাবকরা নাকি 'তৃতীয় পক্ষে'র উপস্থিতি লক্ষ্য করে তাদের ছেলেপেলেকে ঘরে নিয়ে গেছেন। আন্দোলনের বিপক্ষে তাদের অবস্থানের কারণ ছিল এই তৃতীয় পক্ষ’, আবার আন্দোলন দমে যাওয়ার কারণও তাদের কাছে তৃতীয় পক্ষ। সবই নন্দ ঘোষের দোষ। তাদের এই তত্ত্বের তলে চাপা পড়ে যায় রাষ্ট্রের সকল যন্ত্র, পুলিশ, আদালত, বেসামরিক সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার কাহিনী। আপনারা যাবতীয় যন্ত্র - সেটা বন্দুক হোক, ইট হোক আর মিডিয়া হোক - সব নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বেন, হুমকি দিবেন রাস্তার কিছুর জন্য সরকার দায়ী থাকবে না, টানা দুই/তিন দিন আক্রমণ করবেন এই বাচ্চাদের, জেলে পুরবেন - তারপর গবেষণা করে বের করবেন, কিভাবে 'তৃতীয় পক্ষে'র ভয়ে ছেলেরা ঘরে ফিরে গেল। এর চেয়ে বড় হিপোক্রেট তত্ত্ব আর হতে পারে না।



বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাজউদ্দীন আহমদ পরিবার বেশ সুপরিচিত। সেখানে তাঁর পুত্র সোহেল তাজও, শুধু পিতার কারণে নয়, তার নিজের কারণেও সুপরিচিত। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি তার ফেসবুকে স্বৈরাচারী শাসক কেমনে চেনা যায় তার একটা চেকলিস্ট দেন। তার পুরো লেখাটা ছিল এরকম

বঙ্গবন্ধু এবং তাজউদ্দীন আহমদের হাতে গড়া সংগঠন আওয়ামী লীগ তার জন্ম লগ্ন থেকে গণ মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে স্বৈরাচারী বিরোধী আন্দোলন করেছে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনেছে এই দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য। পরবর্তীতে একই ধারায় আওয়ামী লীগ জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতিটি সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে।
ইদানীংকালে আমরা অনেকেই স্বৈরাচারী শাসন কি তা হয়তো ভুলে গিয়েছি। নতুন প্রজন্মের জন্য ছোট্ট করে নিম্নে কিছু নমুনা দিলাম, যাতে করে আমরা ভবিষ্যতে স্বৈরাচার কি তা চিহ্নিত করতে পারি।

স্বৈরাচারী শাসন চেকলিস্ট:
১. যখন সাধারণ মানুষ তার মুক্তচিন্তা ব্যক্ত করতে ভয় পায়।
২. যখন দল, সরকার এবং রাষ্ট্র একাকার হয়ে যায় আর সরকারকে সমালোচনা করলে সেটাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা বলে আখ্যায়িত করা হয়।
৩. যখন দেশের প্রচলিত নানা আইন এবং নতুন নতুন আইন সৃষ্টি/তৈরি করে তার অপব্যবহার করে রিমান্ডে নেয়া এবং নির্যাতন করা হয়
৪. বিনা বিচারে হত্যা ও গুম করে ফেলা হয়।
৫. রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহকে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ব্যবহার করা হয়।
৬. আইনশৃঙ্খলা রক্ষীবাহিনী পুলিশসহ অন্যান্য সংস্থাকে পেটোয়া বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
৭. যখন সাধারণ নাগরিকসহ সকলের কথাবার্তা, ফোন আলাপ, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট মনিটর ও রেকর্ড করা হয়।
৮. যখন এই সমস্ত বিষয় রিপোর্ট না করার জন্য সংবাদমাধ্যম, সাংবাদিকদের গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে হুমকি দেয়া হয়।

উপরের প্রতিটি পয়েন্ট পড়ে যে কেউ দেশের বর্তমান পরিস্থিতির সাথে মেলাতে পারবেন, সোহেল তাজ সরাসরি বর্তমান পরিস্থিতির কথা না বললেও আকলমন্দের জন্যে ইশারাই যথেষ্ট। এ নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। গুম, বিনা বিচারে হত্যা, ৫৭ ধারার অজুহাতে গ্রেফতার, পুলিশের সাথে অন্যান্য পেটোয়া বাহিনীকে ব্যবহার করা, সবকিছু রেকর্ড করা, হুমকি ধমকি দেয়া এই সবকিছু গত কয়েকদিনে বাংলাদেশ বেশ ভালোভাবেই প্রত্যক্ষ করেছে। তাই সকলেই যা বুঝার তা বুঝেনও।  সোহেল তাজ যা বলেছেন তা কতটা ঠিক, মানে এই চেকলিস্ট কতটা সঠিক, আর কি কি বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে, এইগুলাই সব কি না - এসব নিয়ে সমালোচনা হতেই পারত, কিন্তু সোহেল তাজের বিরুদ্ধে সমালোচনা হলো পুরো অন্য খাতে। সেই সমালোচকরা বলতে লাগলেন সোহেল তাজের এই বক্তব্যের কারণে তিনি তৃতীয় পক্ষের সুবিধা করে দিয়েছেন,  আওয়ামীবিরোধীদের হাতে সুযোগ তুলে দিয়েছেন। এই সমালোচনার চাপ এত বেশি ছিল যে তিনি না বললেও আমরা বুঝতে পারি, ফেসবুকে তার সেই লেখাটির যোগ-বিয়োগ আমাদেরকেও অনেক কিছু বুঝতে সাহায্য করে।

উল্লেখ করতে হয়, এখানে এক পক্ষের সমালোচনাকে আরেক পক্ষের প্রশংসা হিসেবে ধরা হয়। মানে, আপনি যদি আওয়ামীলীগের সমালোচনা করেন, তাইলে আপনি 'বিএনপি-জামায়াত' মার্কা গায়ে মাখবেন, আর যদি আপনি 'বিএনপি-জামায়াত' এর সমালোচনা করেন তাইলে 'আওয়ামীলীগ' মার্কা গায়ে মাখবেন। 

দুই বাক্সের মধ্যে ঘুরপাক খাওয়া - চিন্তা পদ্ধতির মধ্যে এই প্রবণতা আমাদের রাজনীতিতে বেশ সক্রিয়। যেমন, শিক্ষার্থীরা যখন আন্দোলন করে আওয়ামীলীগ/সরকার দলীয় মনোভাব কেমন ছিল সেটা পূর্বেই বলা হয়েছে, অন্যদিকে বি এন পি-জামায়াতওয়ালারা বেজায় খুশি হয়ে ওঠে যে ছাত্ররা আন্দোলন করছে। সে খুশির কারণ আবার ছাত্রদের বিদ্রোহী মনোভাব নয়, বরং অন্য। একজন বেজার মুখে কইতেছিল পোলাপান আমগো লগে আন্দোলনে নামলেই পারত! কিন্তু তারা বারেবারে ভুলে যাচ্ছিলেন এই পোলাপানগুলো যারা রাষ্ট্রেরই লাইসেন্স চাইছে এরা দুই দলকেই ভালো করে জানে ও চিনে। এরা এই রেজিমের বিরুদ্ধে মানে আপনার পক্ষে না। এরা জানে আপনারা পেট্রোল বোমায় কতটা গরীব মানুষ মেরেছেন, এরা জানে আপনাদের গ্রেনেড হামলার কথা। এরা মনে প্রাণে দুই দলীয় মাইর থেকে বাচতে চায়।

দুই দলীয় মাইরের ইতিহাস ও শিকড় অনেক গভীরে। এখানে যে রাজনীতিচর্চা চলছে তার সূচনা হয়েছিল উপনিবেশ আমলে, উপনিবেশিকদের প্রত্যক্ষ মদদে ও সুপ্ত বাসনায়। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের পরে ব্রিটিশরা তাদের শাসনকে দীর্ঘায়ত করার জন্যে যে  ডিভাইড এন্ড রুলপলিসি হাতে নেয় তার কোলেই জন্ম নিয়েছিল এই 'দ্বি দলীয় রাজনীতি', এরই নাম এরা দিয়েছিল 'গণতন্ত্র'! কংগ্রেস যেমন উনারা গঠন করছেন তেমনি মুসলিম লীগ গঠনেও তারা সাহায্য করছেন। এবার বরং দেশীয়রা নিজেদের মধ্যেই মারামারি করুক, তবু মূল শাসকের বিরুদ্ধে না নামুক। যত শক্তি সব নিজেদের মধ্যেই ব্যয় করুক, মূল শাসকের বিরুদ্ধে না। উপনিবেশিকরা যখন চলে গেলেন তখন ক্ষমতা দিয়ে গেলেন নিজেদের বানানো মানুষদের হাতেই। তৈরিকৃত এই মানুষদের যারাই ক্ষমতায় আসেন তারা জনগণকে ভয় দেখান অপর পক্ষ নিয়ে। জনগণ হাবুডুবু খাচ্ছে দুই পুকুরের মধ্যে, আর পুকুরের চিকন পার দিয়ে ক্ষমতা-লোভী দুই দলই হেঁটে বেড়ায় নিশ্চিন্তে। জনগণ খানিক মাথা তুলতে গেলেই এক পারের শাসক ভয় দেখায় আরেক পারের শাসককে দেখিয়ে।  দেখা গেলো উপনিবেশিকরা চলে গেলেও আমরা সেই মানসিক দাসত্ব বহন করে চলছি এখনো।  এর একটা বড় প্রমাণ হচ্ছে আমাদের চিন্তাভাবনায় দুই দল-কেন্দ্রিক ভাবনার আধিপত্য। তাই কেউ কোন কথা বললে তার কথার যৌক্তিকতা নিরূপণ করি আমরা দুই দলের বাক্সকে বিবেচনা করে। তার কথা কোন বাক্সে যাচ্ছে এইটাই হয়ে উঠে আমাদের মূল বিবেচনা। সোহেল তাজ একটা কথা বলেছেন। তার কথায় যুক্তির উপস্থিতি আছে কি নাই, বাস্তবতা আছে কি নাই - এর চেয়েও বড় বিবেচ্য হয়ে উঠছে তার কথা বিএনপি-জামায়াত এর জন্যে লাভবান হলো কি না! এর চেয়ে বড় বুদ্ধিবৃত্তিক দেউলিয়া-পনা আর কি হতে পারে?

No comments:

Post a Comment