... আমি বলিব ঢাকা শহরে তারেক মাসুদ নাই বলিয়া এই শহরকে বসবাসের আরো অযোগ্য মনে হইতেছে।’
- সলিমুল্লাহ খান
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক সাহিত্যে (বিশেষত গল্প, সিনেমা, উপন্যাসে) কোনো সন্দেহ নেই বাঙালি জাতীয়তাবাদের জয়জয়কার; এই জাতীয়তাবাদ তার ‘সেকুলার’ চরিত্র ধারণ করার জন্য অদ্ভুতভাবে মুক্তিযুদ্ধ ও ধর্মকে একধরনের বিপরীত মেরুতে ঠেলে দিয়েছে, অথবা বলা যায় মুক্তিযুদ্ধ ও ধর্মকে বিপরীত হিসেবে উপস্থাপন করেছে। ফলে মুক্তিযুদ্ধের অধিকাংশ সিনেমা-নাটকে-উপন্যাসে রাজাকারের একটা সাধারণ চিত্রায়ন থাকে: রাজাকারের দাড়ি থাকে, পাঞ্জাবি-পাজামা পরে, মাথায় টুপি থাকে, মাদ্রাসা বা মসজিদে ইমামতি করে, নিয়মিত যায়। ‘দাড়ি-টুপি’ দিয়ে রাজাকারের এই চিত্রায়ন কতটা সত্য আর কতটা আত্মপরিচয়ের রাজনীতির খাতিরে ‘নির্মিত’ তা খুব একটা বিচার করে দেখা হয় নি। বরঞ্চ, এই চিত্রায়ন আমাদের মাথার এতো গভীরে ঢুকে গিয়েছে যে, প্রতিদিনকার জীবন-যাপনে বন্ধুবান্ধবদের কেউ যদি দাড়ি-টুপি পরেছে তখন অন্যদের বলতে শুনেছি, ‘আরে শালা তোরে তো রাজাকার লাগে’। কিন্তু, এই ‘দাড়ি-টুপিওয়ালা’দের রাজাকার বা ভিলেন হিসেবে একরৈখিক উপস্থাপন এখানে যে কালচারাল হেজিমনে তৈরি করেছে তার ফলাফল হয়েছে ভয়ঙ্কর; শাহবাগের সময় জাতীয়তাবাদ ও ধর্ম প্রশ্নে এমনভাবে পুরো দেশের একধরনের আড়াআড়ি ভাগ হয়ে যাওয়ার একটা কারণ বোধহয় আমাদের এই চলমান সাংস্কৃতিক আধিপত্যের মধ্যেও পাওয়া যেতে পারে।